আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে তালিবান। তারও আগে থেকেই সবাইকে স্বাভাবিকভাবে কাজে ফেরার আহ্বানও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। তবে এরপরও আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অবস্থিত দেশটির নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভবনে নারী কর্মীদের ঢুকতে দিচ্ছে না তালিবান। ভবনটিতে শুধু পুরুষদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
আফগান মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মীর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রুশ বার্তাসংস্থা স্পুটনিক নিউজ এবং ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
মন্ত্রণালয়ের ওই স্টাফ স্পুটনিক নিউজকে বলেন, ‘এখানে কর্মরত চারজন নারী কর্মীকে মন্ত্রণালয়ের ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’ ওই নারীরা তখন মন্ত্রণালয়ের বাইরে প্রতিবাদ করবেন বলে মনস্থির করেছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের প্রথম মেয়াদে নারীদের অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছিল। গত মাসে আবার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নারী অধিকার রক্ষায় নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল তালিবান। তবে দেশটিতে নারীরা আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর নারী অধিকার নিয়ে সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ইসলামের ওপর ভিত্তি করে নারীদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তালিবান। স্বাস্থ্য খাতসহ অন্য যেসব খাতে তাদের প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে তারা কাজ করতে পারবেন। নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হবে না।
নারীদের অধিকার নিয়ে তালিবান নানা কথা বললেও এর প্রতিফলন তেমন ঘটছে না সংগঠনটির কাজকর্মে। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তালিবান। সেখানে রাখা হয়নি কোনো নারী সদস্যকে। যদিও তারা প্রথম থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল।
এ ছাড়া তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের পর থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলেন দেশটির নারীরা। সেসব বিক্ষোভের ওপর হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেদম মারধরের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা।
তালিবানের অধীন নারীদের পড়ালেখা ও খেলাধুলার ওপরও খড়্গ নেমে এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জারি করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। সম্প্রতি তালিবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আফগানিস্তানের ৪০০ রকম খেলার অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে এসব খেলায় নারীরা আদৌ অংশ নিতে পারবে কি না, সে সম্পর্কে কিছুই জানায়নি সংগঠনটি।
আফগানিস্তানে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তালিবান। এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। কোনো নারীর স্থান না হওয়া নতুন এই সরকারে এমন সব জ্যেষ্ঠ ও কট্টরপন্থি তালিবান নেতাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা গত দুই দশক ধরে দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর জঘন্য সব হামলা পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত।
গত সপ্তাহে তালিবানের মুখপাত্র সাঈদ জাকরুল্লাহ হাশিমি আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে জানান, নারীরা মন্ত্রী হতে পারবেন না, তাদের কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া। তার এই বক্তব্যের ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
তোলো নিউজকে তালিবান মুখপাত্র বলেন, ‘একজন নারী মন্ত্রী হতে পারেন না। এটা এমন যে, আপনি তার গলায় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিলেন, যার ভার সে বহন করতে পারে না। মন্ত্রিসভায় নারী থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের কাজ হওয়া উচিত সন্তান জন্ম দেওয়া। বিক্ষোভকারী নারীরা সব আফগান নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৭
আপনার মতামত জানানঃ