বিগত এক বছরে বিশ্বে ইন্টারনেটের গড় গতি বৃদ্ধি পেয়েছে যখন ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশে সেখানে বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ হিসেবে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক গড়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
মোবাইল ইন্টারনেটে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বাংলাদেশের গড় অনেক নিচে। তবে কিছুটা এগিয়ে আছে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে বিশ্বে ব্রডব্যান্ডের সংযোগের গতি বেড়েছে গড়ে ৩১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’র তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়ার হার ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অথচ এ সময়ে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেটের গতি গড়ে বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০১৮ সালের জুনে মোবাইল ইন্টারনেটের গতির হিসাবে ১২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। সে সময় বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ছিল ৮ দশমিক ৯৭ এমবিপিএস। এ ছাড়া আপলোড স্পিড ৫ দশমিক ৪৬ এমবিপিএস।
২০২০ সালের জুলাইয়ে বিশ্বে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোডের গড় গতি ছিল সেকেন্ডে ৩৪ দশমিক ৫২ মেগাবাইট (এমবিপিএস)। চলতি বছরের জুলাইয়ে এসে তা বেড়ে হয়েছে ৫৫ দশমিক শূন্য ৭ এমবিপিএস। আর বাংলাদেশে গত বছরের জুলাইয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোডের গড় গতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ এমবিপিএস। এক বছরের ব্যবধানে তা হয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ৬ এমবিপিএস।
ওকলার মোবাইল ইন্টারনেটের গতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই শেষের দিকে। জুনের মতো জুলাইয়েও বাংলাদেশ ছিল ১৩৫ নম্বরে। তবে জুনের প্রতিবেদনে তালিকায় ছিল ১৩৭ দেশ আর জুলাইয়ে ছিল ১৩৯ দেশ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, মে মাস শেষে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ। সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার কেউ ইন্টারনেটে সক্রিয় হলেই তাকে গ্রাহক হিসেবে গণ্য করা হয়। বিটিআরসির হিসাবে, ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকসংখ্যা ৯৮ লাখের কিছু বেশি।
ওকলার তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট রয়েছে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। ডাউনলোডের গতি ১৯৩ এমবিপিএসের বেশি। এরপরে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, নরওয়ে ও সাইপ্রাস।
অনলাইনে ইন্টারনেটের গতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্পিডটেস্টের চলতি বছরের জুনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়া, সিরিয়া, উগান্ডা ও সোমালিয়ার মোবাইল ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড হচ্ছে ১৬ দশমিক ৬ থেকে ২২ দশমিক ২ এমবিপিএস পর্যন্ত।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম ৫৮, মালয়েশিয়া ৮৯, কম্বোডিয়া ৯১, নেপাল ১০৫, মিয়ানমার ১০৯, পাকিস্তান ১১৪, ভারত ১২২ এবং শ্রীলঙ্কা ১২৯তম অবস্থানে রয়েছে। সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি দেশ হলো ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও সুদান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনকার বিশ্ব টিকে আছে ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে। বিল পেমেন্ট থেকে কেনাকাটা পর্যন্ত সবকিছুই ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এমন সময় ইন্টারনেটের গতির দিক থেকে এতটা পিছিয়ে থেকে দেশকে ডিজিটাল করা সম্ভব না। সুতরাং, ফোরজি-ফাইভজির প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতির দিকে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮২১
আপনার মতামত জানানঃ