বিদেশি রাষ্ট্রগুলো যখন নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে তালিবানকে আহ্বান জানাচ্ছে, তারা তখন তাদের পুরনো নিয়মই আবার আফগানিস্তান পরিচালনার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। কট্টরপন্থী ইসলামিক এ গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতা ওয়াহেদউদ্দিন হাশিমি বলেছেন, আফগান নারীদের পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার অনুমতি দেওয়া ‘উচিত হবে না’।
এ কথার প্রেক্ষিতে রয়টার্স জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিয়ম চালু করা হলে সরকারি অফিস, ব্যাংক কিংবা মিডিয়া কোম্পানিসহ অনেক ক্ষেত্রেই আফগান নারীদের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি রয়টার্সকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে তালিবান আফগানিস্তানে পুরোপুরি শরিয়া অথবা ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন করবে। আফগানিস্তানে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য আমরা ৪০ বছর লড়াই করেছি। শরিয়া পুরুষ এবং নারীদের একসঙ্গে কাজ করার অনুমতি দেয় না।’
গত মাসে তালিবান আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বলেছিল, নারীরাও কাজ করতে পারবে এবং পড়াশোনার সুযোগ পাবে। তবে তালিবান নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য আফগানিস্তানে নারীদের কাজ করার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালিবান শাসনামলে পুরুষের লিখিত অনুমতি ছাড়া নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। সেই অনুমতি থাকলেও তাদের বের হতে হত সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরে। বয়ঃপ্রাপ্ত হলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ, নারীদের চাকরি করারও সুযোগ ছিল না।
দেশটিতে আবারও সেসব নিয়ম কায়েম হবার ভয়ে নারী রাজনীতিবিদদের অনেকে দেশ ছেড়েছেন। নারী ক্রীড়াবিদ, অভিনয় শিল্পী, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীদের অনেকেই আছেন আত্মগোপনে। এমনকি আগের সরকারের সময় বিচারকের ভূমিকায় থাকা নারীদেরও এখন পালিয়ে থাকার খবর আসছে, কারণ যাদের তারা শাস্তি দিয়েছিলেন, তারা এখন সেই বিচারকদের খুঁজছে।
যদিও তালিবান কাবুল দখলের পর এ বাহিনীর মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নারীরা হবে আফগান সমাজের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশ’। তারা ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে’ কাজ করারও সুযোগ পাবেন।
কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর যখন তালিবানের মন্ত্রিসভার ঘোষণা এল, সেখানে কোনো নারী থাকলেন না। এমনকি এমন অনেক খবরও এল যে বিভিন্ন অফিস থেকে নারীদের সরাসরি বলে দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন আর কাজে না যান।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানে ২০০১ সালে তালিবান শাসনের অবসানের পর গণমাধ্যমের কাজের ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। তবে হাশিমি বললেন, তাদের নিয়মে মেয়েরা মিডিয়াতেও কাজ করতে পারবে না।
তার ভাষায়, বাড়ির বাইরে কেবল কিছু ক্ষেত্রেই পুরুষ আর নারীর সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া যায়, যেমন কোনো নারী চিকিৎসার প্রয়োজনে হয়ত পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
এদিকে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টিওএলওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালিবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি সম্প্রতি বলেছেন, ‘নারীরা মন্ত্রী হতে পারবে না তাদের কাজ শুধু জন্ম দেওয়া। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালিবান ছিল তখন নারীদের শিক্ষা এবং চাকরি করা নিষিদ্ধ ছিল।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের দ্বিমুখী কথাবার্তাকে সন্দেহের চোখে দেখা ছাড়া অবকাশ নেই। নারীদের তারা আগের মতই অন্ধকার যুগে রাখতে চায় শরিয়া আইনের অজুহাতে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিজেএ/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ