আফগানিস্তানে চলতি সপ্তাহেই একটা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দিয়েছে তালিবান। কিন্তু নতুন এই সরকারে শুধু পুরুষদেরই রাজত্ব। একজন নারীকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। আফগানিস্তানের নতুন গঠিত তালিবানের মন্ত্রী সভায় নারী সদস্য না রাখায় অনেক দেশ সমালোচনা করছে।
১৯৯৬ সালে তালিবানের প্রথম শাসনামলে গঠিত মন্ত্রিসভায়ও কোনো নারী সদস্য ছিলো না। শুধু কি আফগানিস্তান এমন আরও ১২টি দেশ আছে যে দেশগুলোর সরকারে কোনো নারী সদস্য নেই।
আফগানিস্তান এখন বিশ্বের এমন ১৩টি দেশের তালিকায় যোগ হলো যে দেশগুলোর সরকারের শীর্ষ পদে কোনো নারী নেই।
বিশ্বের দেশগুলোর জাতীয় পার্লামেন্টসমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) তথ্য অনুসারে, অন্য ১২টি দেশ হচ্ছে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, ব্রুনাই, উত্তর কোরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সেইন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিনজ, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, টুভালু, ভানুয়াতু, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেন।
আইপিইউর তথ্য অনুসারে, তালিবানের নিয়ন্ত্রনের আগে পূর্ববর্তী আশরাফ গনির আফগান সরকারের মন্ত্রিসভায় নারীর অবস্থান ছিলো ছয় দশমিক পাঁচ ভাগ। গনি মন্ত্রিসভার প্রায় ৩০ জন মন্ত্রীর মধ্যে তিনজন ছিলেন নারী।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়ে থাকা আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।
এ নিয়ে বুশ প্রশাসন ও তালিবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালিবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে। এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।
২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়।
এরপর দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালিবান সম্মত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ডেডলাইন থাকলেও ৩০ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালিবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালিবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালিবান।
৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালিবান যোদ্ধারা। তালিবানের অগ্রসরে আশরাফ গনির কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জেরে আফগান প্রশাসন ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশ করে তালিবান যোদ্ধারা।
তবে কাবুলের উত্তরের দুর্গম পাঞ্জশির প্রদেশ শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গিয়েছিলো। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালিবানবিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধারা এই উপত্যকায় অবস্থান নিয়েছিলো।
৬ সেপ্টেম্বর পাঞ্জশির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালিবান। এর পর ৭ সেপ্টেম্বর নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় দলটি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২২
আপনার মতামত জানানঃ