শিশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামরির বিরুদ্ধে লড়াই এক মারাত্মক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তিন সপ্তাহে দেশটির পাঁচ লক্ষাধিক শিশু মহামারি কোভিড আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবার বয়স ১১ বছরের মধ্যে; যাদের এখনও করোনার টিকা দেওয়া হয়নি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ১২ বছরের নিচে কোনো শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না।
সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য টিকার অনুমোদন দেয়নি এখনো। ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা জরুরী অনুমোদনের অধীনে ফাইজার-বায়োটেক টিকা পেতে পারে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী গত মাসে ৫ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ২১ দিনে পাঁচ লাখের বেশি শিশু মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
শুধু ১৯ থেকে ২৬ আগস্টের সপ্তাহে অন্তত ২ লাখ ৩ হাজার ৯৬২ শিশুর কোভিড শনাক্ত হয়েছে। জুনে শিশু-সংক্রমণ ছিল সপ্তাহে সাড়ে ৮ হাজার মতো। দুই মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ২৫ গুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোতেও এক-এক করে স্কুল খুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনেক স্কুল মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছে। মাস্ক অনেকটাই সংক্রমণ আটকে দেয়। কিন্তু সবটা পারে না।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘যে সব শিশু টিকা পায়নি তারাই বেশি ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হচ্ছে। যাদের জন্য টিকা নেওয়ার অনুমোদন আছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সেই অংশের মধ্যেও টিকা নেওয়ায় অনীহা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর-কিশোরীদের টিকা নেওয়ার হারও বেশ কম।’
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব শিক্ষার্থী টিকা নেয়নি, প্রতি সপ্তাহে তাদের কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। টিকা নিতে হবে সবাইকে। বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরাসহ সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিগুলোও মেনে চলতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র তথা বর্তমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, ‘স্কুলগুলোতে কোভিডের টিকা বাধ্যতামূলক করা সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত। এটা কোনো কট্টরপন্থা নয়। আগেও এমন হয়েছে। দেশের অনেক জায়গায় বহু স্কুলে এমন নিয়ম আছে।
অ্যান্থনি ফাউচি আরও বলেছেন, বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হলে পোলিও, হাম, মাম্পস, রুবেলা, হেপাটাইটিসের টিকা দিতে হবে। অতএব এই নিয়ম নতুন নয়। স্কুলে পাঠাতে হলে শিশুদের এবার মহামারি করোনার টিকাও বাধ্যতামূলক করতে হবে।’
দেশটির শিশুরোগ গবেষণা ও চিকিৎসা বিষয়ক শীর্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠান আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের সাবেক প্রেসিডেন্ট স্যালি গোজা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি গত বছরের কোভিডের মতো নয়, বরং তার চেয়েও খারাপ এবং আমাদের শিশুরা যে চরম ঝুঁকিতে আছে, সাম্প্রতিক চিত্র তারই উদাহারণ।’
বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ঢেউয়ের তুলনায় তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের সেই পূর্বাভাসও বোধহয় মিলে যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৩৪
আপনার মতামত জানানঃ