করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন রূপ আবিষ্কৃত হওয়া থেমে নেই। এবার দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট সি.১.২ পাওয়া গেছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি এখন অব্দি কালের সবচেয়ে বেশি পরিবর্তিত ভাইরাস বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ভ্যাকসিন কার্যকর নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিক্যাবল ডিজিস এবং কোয়াজুলু-নাটাল রিসার্চ ইনোভেশন অ্যান্ড সিকোয়েন্সিং প্লাটফর্মের নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। তবে গবেষণাটি এখনও প্রিপ্রিন্ট পর্যায়ে রয়েছে। এটি পিয়ার রিভিউ-এর অপেক্ষায় রয়েছে। এ খবর দিয়েছে জেরুজালেম টাইমস।
২০২১ সালের মে মাসে প্রথম সি.১.২ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এটি জানুয়ারিতে প্রথম শনাক্ত হওয়া সি.১ ভ্যারিয়েন্টের পরিবর্তিত রুপ। চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তিত রুপ হলো নতুন ভ্যারিয়েন্টটি।
খবরে বলা হয়, গত ২১শে মে প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এটি সি.১ ভ্যারিয়েন্ট থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সি.১ শনাক্ত হয়েছিল এ বছরের জানুয়ারি মাসে।
নতুন সি.১.২ দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ইংল্যান্ড, চীন, কঙ্গো, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডেও শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতাকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। গবেষনাটিতে দেখা গেছে, প্রতি মাসেই এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল ০.২ শতাংশ। জুনে তা বেড়ে হয় ১.৬ শতাংশ এবং জুলাইতে হয় ২ শতাংশ। বেটা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
এই গবেষণায় আরও জানানো হয়, এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন রেট বছরে ৪১.৮ বার। যা বর্তমানে থাকা ভ্যারিয়েন্টগুলোর দুইগুন প্রায়।
এর আগ অব্দি করোনাভাইরাসের সর্বশেষ যে ভ্যারিয়েন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নজরে এসেছে সেটি হচ্ছে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট। গত বছর দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পেরুতে এই ভ্যারিয়েন্ট সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ২৭টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে।
ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টকে করোনাভাইরাসের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করছেন করছিলেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়, ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে পেরুতে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৪ই জুন এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, যখন নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া যাবে তখন বিষয়টি সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অফিস অথবা আঞ্চলিক অফিসে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দেহে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় তার নাম, ঠিকানা, সময় এবং চিকিৎসার যাবতীয় নথিপত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে দিতে হয়। এছাড়া সেই ভ্যারিয়েন্টের পুর্নাঙ্গ জেনোম সিকোয়েন্সও করতে হয়।
ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের পরে সম্প্রতি নজরে এলো সি.১.২। এ নিয়ে উগ্বিগ্নতাও বেড়েছে অনেক। ভাইরাসটিতে ভ্যাক্সিন কার্যকারী হবে কি না এ নিয়ে বেশি শঙ্কিত হয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ