১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে নারী এবং নারীর পরিবারের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আগেরবারের তালিবানি শাসন মনে করে ভয়ে কাবু হয়ে আছে আফগান নাগরীকরা। এমন সময় নিরাপত্তার অজুহাতে নারীদের বাসায় থাকার নির্দেশ দিলো তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান।
তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, নারীদের নিরাপত্তা এবং কর্মক্ষেত্রে ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সাময়িকভাবে তাদের ঘরে থাকতে হবে।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, নারীদের কর্মস্থলে যোগদানে স্থায়ীভাবে বাধা দেওয়া হবে না। তারা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিদেশি সৈন্য, দূতাবাস কর্মী এবং আফগান মিত্রদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেওয়ায় মার্কিন মিত্ররা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করেছে। লোকজনকে সরাতে এই সময়সীমা বাড়ানো যায় কি-না তা নিয়ে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশ— ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রে সমন্বয়ে গঠিত জোট জি-৭ এর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তালিবান পশ্চিমাদের এই আলোচনা উড়িয়ে বলেছে, ৩১ আগস্টের পর আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে দক্ষ আফগানদের সরিয়ে নেওয়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানান। একই সঙ্গে পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর লোকজন সরিয়ে নেওয়ার জন্য আগামী ৩১ আগস্টের পর আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
২০০১ সালের আগে তালিবান যখন আফগানিস্তান শাসন করতো, তখন তারা কঠোর শরীয়া আইন জারি করেছিল। ১৫ আগস্ট তারা আবারও আফগানিস্তানের পূর্ণ ক্ষমতা নিয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ তালিবানদের দ্বারা নির্যাতনের নির্ভরযোগ্য কিছু প্রতিবেদন তুলে ধরেছে যার মধ্যে নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অন্যতম।
এদিকে, নারীদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশলেট গতকাল মঙ্গলবার বলেন যে, তিনি তালিবানদের দ্বারা শিশু সৈনিক নিয়োগ এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কথা জানতে পেরেছেন।
তিনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন। পরে, কাউন্সিল নারী ও মেয়েদের অধিকারের প্রতি তার “অটল অঙ্গীকার” নিশ্চিত করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে।
কিন্তু অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত প্রতিনিধি পাঠানোর যে আহ্বান জানিয়েছিল তা শেষমেশ অনুমোদন পায়নি।
ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে, তালিবান বেশ সংযত আচরণ করছে এবং তারা নারী ও মেয়েদের অধিকার এবং বাক-স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি বাইডেন মঙ্গলবার জি সেভেন-ভুক্ত নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তবুও তালিবানি ভয়ে ব্রিটিশ নাগরিক, অন্যান্য বিদেশি নাগরিক এবং বিদেশে পুনর্বাসনের যোগ্য আফগানসহ হাজার হাজার মানুষ এখনও আফগানিস্তান ত্যাগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪৩৭
আপনার মতামত জানানঃ