চারিদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, দাবানল, ভূমিকম্পে ইতিমধ্যে যেমন প্রাণহানি হয়েছে তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বেহিসাবি।
এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলো মেক্সিকোতে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় গ্রেইসের আঘাতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল (২২ আগস্ট) শনিবার দিবাগত রাতে দেশটির ভেরাক্রুজ রাজ্যে আছড়ে পড়ে র্ঘূণিঝড় গ্রেস। এই অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঝড়ের সঙ্গে আসা প্রবল বর্ষণ ও তুমুল বাতাসে মেক্সিকোর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি স্থানীয় সময় শনিবার ঘণ্টায় ২০১ কিলোমিটার গতিবেগে ভেরাক্রুজ অঙ্গরাজ্যের টেকোলুটলার রিসোর্টের কাছের উপকূলে আঘাত হানে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় উপকূলীয় এলাকায়। দেশটির রাজ্যের সরকার জানায়, গ্রেইসের কারণে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ভেরাক্রুজ-এর রাজধানী জালাপাতে ভূমিধসে একই পরিবারের ছয় সদস্য মারা যান।
দেশজুড়ে এখনও রাষ্ট্রীয় জরুরি সতর্কতা বহাল রয়েছে। স্থানীয় টেলিভিশনের খবরে দেখানো হয়েছে, অতি বৃষ্টিতে সৃষ্টি বন্যায় জালপালা শহরের পথ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের কাছে অক্টোপ্যান নদীর তীর ভেঙে স্থানীয় একটি হাইওয়ে প্লাবিত।
ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে অনেক জায়গার গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় ভবন এবং গাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের দৃশ্য প্রকাশ হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় সেখানকার মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। চলতি বছরের মধ্যে মেক্সিকোতে এখন পর্যন্ত এটিই শক্তিশালী ঝড়।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ঝড়ের প্রভাবে এসব জেলার ২৬ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশের ১৬ জেলার ৮২ উপজেলা এবং ১৩ পৌরসভায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাব পড়ে। আর ঝড়ে মারা গেছেন ৯ জন।
ইয়াসের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় বাঁধ, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। ক্ষতির মুখে পড়ে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ। ইয়াসের প্রভাবে নোয়াখালীতে দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ১০০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পটুয়াখালীর আট উপজেলার পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ জেলায় চার হাজার ২০৯টি বাড়িঘর আংশিক এবং ৪৮৪টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুরে এক লাখ আট হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঝিনাইদহে ৯৪টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইয়াসে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। এই জেলায় ৯৪ হাজার ৮৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরার আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর উপজেলার পৌনে ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে। এছাড়াও ছয় হাজার ৭৩৮ হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাগেরহাট জেলায় ২৪ হাজার ৯১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানে ৬৯০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বরগুনায় বিভিন্ন উপজেলার ১৭ হাজার ৩২০ জন মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় এক হাজার ৮০০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলায় সাত হাজার ৭৩০টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং তিন হাজার ৫৭৯টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
কক্সবাজারে ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুই হাজার ৪৭০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনীতে ২০০ বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠির এক লাখ ৪৯ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টি। খুলনার চার উপজেলায় দুই হাজার ২৪০টি ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার মানুষ।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরে ২২ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, বরিশালের ১০ উপজেলা এবং ছয় পৌরসভার এক লাখ ২৭ হাজার ১৬২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশালে এক হাজার ২০০ ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরায় প্রভাবে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ২৬০ জন মানুষ।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের সব ডিপার্টমেন্ট মিলে ডি-ফরমে চূড়ান্ত হিসাব পাঠাবে। সেই হিসাবটাই মূলত বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৭৫৫
আপনার মতামত জানানঃ