চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত দেশে ৬ হাজার ৬৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত শঙ্কাজনক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দেশের সার্বিক করোনা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ আশঙ্কার কথা জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তা অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি নয়, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। সর্বমোট ২৬ জনের মৃত্যু আমরা রেকর্ড করেছি। যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই ৬ হাজার ৬৫০ জন রোগীর বিপরীতে ২৬ মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। আমরা মনে করি, এ বিষয় নিয়ে সম্মিলিতভাবে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগ যেভাবে কাজ করছে, এই কাজের গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা সম্ভব।
নাজমুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল এলে আমরা দেখি যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রূপ নেয়। গত ২০১৯ সালে আমরা দেখেছি যে একটি ডেঙ্গু মহামারি আমাদের কীভাবে আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসেও একই রকম একটি পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। তবে আমরা মনে করি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সেটি মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯২ জন রোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। জুলাই মাসে ২ হাজার ২৮৬ রোগী পেয়েছিলাম। কাজেই জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যাতে না যায় সে জন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোধে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেভাবে করছেন, সে কাজের আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিলে খুব সহজেই ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব। এছাড়া, বাড়িতে ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে-বাইরে জমে থাকা যেসব পানি আছে, সেগুলো অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি সময় বাসার বাইরে যদি কেউ অবস্থান করেন, তাহলে বাথরুমের কমোড, প্যান ইত্যাদি ঢেকে রাখতে হবে। পানির পাত্র পরিষ্কার করে উল্টে রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য মুখপাত্র বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদেরকে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে শরীর ঢেকে রাখে এমন কাপড় পরিধান করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
জ্বর এলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কারো শরীরে জ্বর এলেই কেবল করোনা মনে করতে হবে তা নয়। পাশাপাশি কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের যে পরীক্ষাটি আছে, এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি করতে হবে। পরীক্ষাটি সহজেই করা যায়। সরকারি-বেসরকারি সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, এ পরীক্ষাগুলো করে ফেলতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৩০৬ জন হাসপাতালে ভর্তি
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৩০৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বাইরে ২৭৩ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এখনো মহামারি বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি মহামারি হওয়ার পর্যায়ে আছে। করোনা মহামারির কারণে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে বিস্তারিত কোনো তথ্য না আসায় সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৯৫৬ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৩৩ জন।
চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ছে। এদিকে, এডিস মশার বিরুদ্ধে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযানসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সামাজিক আন্দোলন চান মন্ত্রী তাজুল
ডেঙ্গু নির্মূলে সমাজের সবার অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
তাজুল ইসলাম বলেন, জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সহজ হবে না। মন্ত্রী, মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে ঢাকাকে মশামুক্ত করে জনজীবনে স্বস্তি এনে দেওয়া সম্ভব নয়। জনগণের অংগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
“মানুষ যদি সচেতন হয়ে এসব বিষয়ে নজর দেয় তাহলে এইডিস মশা নির্মূল করা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব।”
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেখানে প্রচুর এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে।
“সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ উদ্যোগে এসব স্থাপনায় মশক নিধন অভিযান চালাতে হবে।”
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিভিল এভিয়েশন এবং রেলওয়েসহ অন্যান্য সরকারি আবাসন ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে সিটি কর্পোরেশন সাথে সমন্বয় করে অথবা নিজেদেরকে মশা নিধনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
মহামারির দিকেই যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এখনো মহামারি বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি মহামারি হওয়ার পর্যায়ে আছে। করোনা মহামারির কারণে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে বিস্তারিত কোনো তথ্য না আসায় সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
তারা বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে আরেকটা ডেঙ্গু মহামারি হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই মহামারি প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। লার্ভা নিধন না করে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা নিধনের প্রতি জোর দিতে বলেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এডিস মশার বিস্তার রোধে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করার দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশে প্রয়োগের জন্য তিনি বিশেষ আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৪
আপনার মতামত জানানঃ