এক সেতু নির্মাণে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি ব্রিজ, ওভারপাস ও ৬.২ কিলোমিটার সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে নির্মিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণের শুরুতেই অস্বাভাবিক ব্যয় নজরে এসেছে সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে প্রায় যেকোনো প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে হওয়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় বারবার সমালোচনার কারণ হলেও থামানো যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহলের এই পুকুরচুরি।
অস্বাভাবিক পরামর্শক ব্যয়
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শক খাতে আরও বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় পরামর্শক সেবার ব্যয় ৬০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা ও জনমাস প্রাক্কলন করতে সুপারিশ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২০ মিটার স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণ, ৭৮০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ২৪০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস, ৫৫১ মিটার সড়ক ওভারপাস, ৬.২০ কিলোমিটার এসএমভিটিসহ ৪ লেনের মহাসড়ক নির্মাণ এবং একটি টোল প্লাজা নির্মাণ।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং এশিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবির) ঋণ থেকে ১ হাজার ৯০৯ কোটি ৭৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।
অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সাথে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপন করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটির গুরুত্ব
সম্প্রতি ময়মনসিংহকে বিভাগ এবং ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। নদের অপর পাশে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও শেরপুর জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, হালুয়াঘাট এবং তারাকান্দা উপজেলা অবস্থিত।
পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগে তিনটি বড় স্থলবন্দর অবস্থিত। স্থলবন্দরগুলো হলো নেত্রকোণা জেলার বিজয়পুর, শেরপুর জেলার নাকুগাঁও এবং ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া (হালুয়াঘাট) স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিবছর ভারত থেকে পাথর ও কয়লা আমদানি করা হয়, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হয়ে থাকে।
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বিদ্যমান শম্ভুগঞ্জ সেতুটি এই অঞ্চলের সাথে ময়মনসিংহ জেলা সদরসহ রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। ফলে অসংখ্য যানবাহন সেতুর উপর দিয়ে অতিক্রম করে। বিদ্যমান শম্ভুগঞ্জ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৫৫ মিটার এবং প্রস্থ ১১ মিটার।
সেতুর অ্যাপ্রাচে একটি চার রাস্তার মোড় রয়েছে। মোড় হতে সেতুটি মাত্র ২৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। চার রাস্তা মোড়ের একপাশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ফলে শহরের বিভিন্ন দিক থেকে ট্রাফিক এসে সেতুটিতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে। ময়মনসিংহ শহরের নিকট ব্রহ্মপুত্র অপর পাশে নতুন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে এই এলাকা হতে ভবিষ্যতে অসংখ্য ট্রাফিক তৈরি হবে। এখানে বিকল্প একটি সেতু নির্মাণ করা না হলে শহরে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
এছাড়াও স্থলবন্দরের যোগাযোগ রক্ষা এবং শহরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। প্রস্তাবিত ৩২০ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি নির্মিত হলে এসব সমস্যাগুলো নিরসন হবে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা এবং এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে। এর ফলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সাথে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ ও উন্নত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো ত্বরান্বিত হবে, যা জিডিপি বৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন, নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধি করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০২১
আপনার মতামত জানানঃ