যুগ যুগ ধরে মহাকাশে প্রাণের বিকাশ খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। এই খোঁজের মধ্যেই সন্ধান মিলেছে বহু আশ্চর্য গ্রহের; তারই একটি ১৬-সাইকি। প্ল্যাটিনাম, সোনা, লোহা, তামা-সহ একাধিক বহুমূল্য ধাতুতে ঠাসা এই গ্রহাণু।
এবার বিজ্ঞানীরা এই পৃথিবীর বুকে এই গ্রহাণুকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। তাদের দাবি, এই গ্রহাণু পৃথিবী দারিদ্রতা ক্ষুধা মন্দা দূর করবে। গ্রহাণুটির এক একটি টুকরোয় বিশ্বের সবাই কোটিপতি হয়ে যেতে পারেন!
আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে, ১৮৫২ সালেই ওই গ্রহাণুটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ইটালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী আনিবেল দি গাসপারিস প্রথন সেটি আবিষ্কার করেন।
প্যাসাডিনার ক্যালটেক গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ৫০ মেগাপিক্সেল রেজোলিউশনের যে ছবি তাদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে গ্রহাণুপৃষ্ঠটি ধাতুতে মোড়া।
শুরুতে আর পাঁচটা মৃতপ্রায় গ্রহাণুর মতোই ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই রহস্যময় হয়ে উঠেছে প্রাণহীন সেই গ্রহাণু। বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৭ কোটি কিলোমিটার দূরে মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি অবস্থান করছে এই গ্রহাণু।
এবার এই ১৬-সাইকির গায়ে আঁচড় কাটতে চলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে এই গ্রহাণু অভিযানে নামছে নাসা। নাসার মহাকাশযানের পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে তিন বছর। তবে গবেষণাই আপাতত লক্ষ্য বিজ্ঞানীদের। এজন্য ২০২৬-এর শুরুর দিকে ওই গ্রহাণু থেকে মূল্যবান ধাতু সমৃদ্ধ খণ্ড তুলে আনা হবে।
১৬-সাইকি গ্রহাণুর শরীরে প্ল্যাটিনাম, সোনা, নিকেল, লোহা, তামা-সহ একাধিক বিরল প্রকৃতির ধাতুর হদিশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে গ্রহাণুটি সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি রহস্য কাটিয়ে উঠতে পারেননি। নাসার মহাকাশযান পৌঁছলে আরও অনেক রহস্যের উদঘাটন হবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
নাসা জানিয়েছে, গ্রহাণুটি মাত্র ২০০ কিলোমিটার চওড়া। তবে এর পৃষ্ঠে জমা বহুমূল্য ধাতুর বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন অর্থাৎ ১০ লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার। গোটা গ্রহাণুটিকে ভেঙে ভেঙে নিয়ে এসে বণ্টন করে দিলে, পৃথিবীর ৭৭০ কোটি মানুষ প্রত্যেকে মাথা পিছু কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন।
নাসা জানিয়েছে, গ্রহ হিসেবে একটু একটু করে গড়ে ওঠার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় কক্ষপথ থেকে বিচ্যূত হয়ে অন্যদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেটি মৃত অবস্থায় ভাসছে মহাশূন্য।
তবে এতদিন মহাকাশ অভিযান যেখানে প্রাণের সন্ধানে এবং জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে বার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এই সম্পদ অভিযান নিয়ে আপত্তিও উঠতে শুরু করেছে। এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত নাসার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী তথা অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড স্পেস এক্সপ্লোরেশনের অধ্যাপক লিন্ডি এলকিন্স ট্যান্টন নিজেই মহাকাশ থেকে এই সম্পদের ভাণ্ডারকে পৃথিবীতে আনার বিপক্ষে।
অধ্যাপক লিন্ডির মতে, এখনও পর্যন্ত ১৬-সাইকি গ্রহাণুর মতো অত্যাশ্চর্যজনক দ্বিতীয় কিছু মেলেনি। এই প্রথম তার অন্তঃস্থলে পৌঁছনোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। কাছাকাছি পৌঁছতে পারলেই গ্রহাণুটি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সেখান থেকে বহুমূল্য ধাতু নিয়ে আসা শুরু হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামবে।
লিন্ডির দাবি, ওই গ্রহাণু থেকে আহরিত সমস্ত ধাতুর মধ্যে শুধু লোহার মূল্যই হয়ত ১০ লক্ষ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে পৃথিবীতে যে লোহা রয়েছে, তার আর কোনও মূল্য থাকবে না। সোনা, প্ল্যাটিনাম, তামাও মূল্যহীন হয়ে যাবে। তাতে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশাল ধস নামবে। সমস্ত দেশের সরকার, খননকার্যে যুক্ত ছোট-বড় সংস্থা, ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
তবে ক্যালটেকের গ্রহবিজ্ঞান এবং জোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ক্যাথরিন দি ক্লিরের মতে, এমনও হতে পারে যে ধাতুগুলি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় নেই। গ্রহাণুর গোটা কলেবরে ভিন্ন ভিন্ন রূপে মিশে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রহের অন্তঃস্থল পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এই অভিযান যুগান্তকারী হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ