করোনা মহামারী কারও জন্য সর্বনাশ; কারও জন্য পৌষমাস। ২০১৯ সাল থেকেই সারা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের। মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ। ধসে গেছে অর্থনীতি। বিধ্বস্ত হচ্ছে শহর, বন্দর, দেশ। লকডাউনের নামে থমকে বিশ্ব। একের পর এক লকডাউন; জরুরি অবস্থা; হাজারও বিধিনিষেধে- কোনো কাজ হচ্ছে না। বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। একবেলা খাবারের নিশ্চয়তাও নেই মানুষের।
বিপর্যয়ের এই দিনে কোটি কোটি মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে করোনার টিকা। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে। একই সঙ্গে ফিরিয়ে দিচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। তবে এই টিকায় শুধু সাধারণ মানুষেরই উপকার হচ্ছে, এমনটা নয়। পালটে যাচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর চেহারাও।
ফাইজার ও মডার্নার মতো কোম্পানিগুলো রীতিমতো টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল এই দুই জায়েন্ট কোম্পানি ইউরোপের জন্য তাদের তৈরি করোনা টিকার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) নতুন চুক্তিতে এর উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি করেছে লন্ডনভিত্তিক পত্রিকা দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
চুক্তিপত্রের একাংশ হাতে পাওয়ার দাবি করে পত্রিকাটি জানিয়েছে, ইউরোপের জন্য ফাইজারের টিকার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ডোজ ১৯ দশমিক ৫০ ইউরো (২৩ দশমিক ১৫ ডলার বা ১ হাজার ৯৭০ টাকা প্রায়), যেখানে আগের চুক্তিতে এর দাম ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৫০ ইউরো বা ১ হাজার ৫৬৯ টাকা করে।
আর মডার্নার টিকার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ডোজ ২৫ দশমিক ৫০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার ১৭০ টাকা। আগের চুক্তিতে ইউরোপকে ২২ দশমিক ৬০ ডলার (১ হাজার ৯২৩ টাকা প্রায়) করে টিকা সরবরাহ করেছিল মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এখন পর্যন্ত মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশি মুনাফা না করার প্রতিশ্রুতি অ্যাস্ট্রাজেনেকা-জনসন অ্যান্ড জনসন।
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা গোটা পৃথিবীতে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত করোনার সবচেয়ে মারাত্মক ধরন এই ডেল্টা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ভারতে ধরা পড়ে এটি। এরপর গত পাঁচ মাসে ১৪০টি দেশে হানা দিয়েছে। আর ডেল্টার কারণেই টিকার চাহিদা এখন তুঙ্গে।
বিশেষজ্ঞরা যেমনটা বলছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বের টিকার বাজার ৭ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে টিকার বুস্টার ডোজের প্রয়োজন পড়বে কিনা সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বুস্টার ডোজ ছাড়াই শত শত কোটি ডলার আয় করছে দুই মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও মডার্না। মার্কিন সরকারের আর্থিক সহায়তায় টিকা উৎপাদন করছে মডার্না। কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ১৭০ কোটি ডলার আয় করেছে। এছাড়া পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর ভ্যাকসিন থেকে তাদের আয় হবে ১ হাজার ৯২০ কোটি ডলার। তবে ডেল্টার কারণে তাদের এই আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
টাকার পাহাড় গড়ছে আরেক মার্কিন কোম্পানি ফাইজারও। গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটি ১০০ কোটি ডোজ টিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করেছে। এখন পর্যন্ত সব লভ্যাংশ বায়োনটেকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছে ফাইজার। জার্মানির কোম্পানি বায়োনটেকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টিকা তৈরি করেছেন তারা।
চলতি বছর ফাইজার আগের চেয়ে অনেক বেশি টিকা তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তারা। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডোজ ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তবে ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা আর যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসন বলছে, মহামারি চলাকালে টিকা বিক্রিতে কোনো মুনাফা করবে না। ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে কয়েকগুণ কম মূল্যে টিকা বিক্রি করছে এই দুই কোম্পানি। দুই ডোজ মিলিয়ে ৪.৩০ ডলার থেকে ১০ ডলার নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বিপরীতে এক ডোজে ১০ ডলার নিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
এরপরও চলতি বছরের প্রথমার্ধে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আয় হয়েছে ১২০ কোটি ডলার। এটিও করোনার প্রথম অনুমোদিত ভ্যাকসিন, এখন সরবরাহ করা হচ্ছে সারাবিশ্বে। গত সপ্তাহে জনসন অ্যান্ড জনসন জানিয়েছে, এ বছর ২৫০ কোটি ডলারের করোনা প্রতিরোধী টিকা বিক্রি করবে তারা। একই সময়ে মডার্নার লক্ষ্য ১ হাজার ৯২০ কোটি ডলারের টিকা বিক্রি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ