সারাবিশ্ব যখন মহামারি করোনাতঙ্কে ভীত, লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সড়ক মহাসড়ক রয়েছে নিষ্প্রাণ। জরুরি পন্যবাহী ছাড়া চলছেনা কোন যানবাহন। আর এই সুযোগ যেন হাতছাড়া করতে নারাজ পুলিশ।
জানা গেছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শককে (এসআই) আটক করেছেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাকে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। অভিযুক্ত এসআই তৌহিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে উপজেলার জমিদারহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এসআই তৌহিদুল জেলা পুলিশের বেগমগঞ্জ সার্কেল কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গত ৫-৬ দিন ধরে বেগমগঞ্জ থানার এসআই তৌহিদুল ইসলাম জমিদার হাট-বাজারের প্রধান সড়কে নেমপ্লেট ছাড়া পুলিশের পোশাকে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিল। রোববার বিকেল ৪টার দিকে যানবাহনে চাঁদাবাজি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডাও হয়।
পরে স্থানীয়রা তাকে চ্যালেঞ্জ করে জানতে চায় সে প্রকৃত পুলিশ কি-না। এরপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে একটি দোকানে আটক করে রেখে পুলিশে ফোন করে। খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে এসআই তৌহিদুল বেগমগঞ্জের জমিদার হাট বাজারের প্রধান সড়কে নেমপ্লেট ছাড়া পুলিশের পোশাকে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন।
রোববার বিকেলে যানবাহনে চাঁদাবাজি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে একটি দোকানে আটক করে থানায় খবর দেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় আনেন।
পরিদর্শক রুহুল আমিন জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, পুলিশের একজন এসআইকে আটক করে রাখার খবর পেয়ে তিনি জমিদারহাট যান। তিনি গেলে লোকজন এসআই তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি সিএনজি অটোরিকশার চালকের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ করেন। তবে তৌহিদুল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরপর তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে এসআই তৌহিদুলকে প্রত্যাহার করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম ওই দৈনিককে বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত এসআইকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শককে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তার প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে প্রয়োজনে নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে সাধারণ চাঁদাবাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে পুলিশ। এখন তারা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে চাঁদাবাজি করছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ওপেন সিক্রেট হলেও বর্তমান সময়ে চাঁদার হার বাড়িয়ে দেয়া পরিবহন শ্রমিকদের জন্য যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তারা বলেন, পুলিশের চাঁদাবাজির বাইরে বিভিন্ন সমিতির নামে পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হলেও লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধের সময় অর্থকষ্টের শিকার পরিবহন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কেউই এগিয়ে আসেনি। কিন্তু গাড়ি চলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগের চেয়ে আরও নিষ্ঠুর রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে সব ধরনের চাঁদাবাজরা। সরকারের উচিত যে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং চিহ্নিত চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনা। চাঁদাবাজির কারণে যেমন সংকটের সময়েও পরিবহন ভাড়া বাড়াতে হয়, তেমনি হাড়ভাঙা খাটুনির পরও শ্রমিকরা কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারেন না। পরিবহন খাতে বিনিয়োগকারীদেরও ভুগতে হয় বহুমুখী চাঁদাবাজদের কারণে। এ অবস্থায় চাঁদাবাজি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।
তারা বলেন, লকডাউনে বিভিন্নভাবে পুলিশের দ্বারা ভোগান্তিতে পড়ছে নিম্ন আয়েরসহ সকল শ্রেণির মানুষ। ট্রাফিক পুলিশ কিংবা কন্সটেবলের দ্বারা যেনো ভোগান্তির নিরসন ঘটে শীঘ্রই সেজন্য উপরমহল থেকে আরও বেশি নজরদারি করা উচিৎ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এবং পুলিশের দ্বারা কোনো অপরাধমূলক কাজ ঘটতে দেখলে সেটার শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলেও মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৬
আপনার মতামত জানানঃ