প্রকল্পের নামে প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, বাজেট বাড়িয়ে প্রকল্পের পরিকল্পনা উপস্থাপন করার ঘটনাগুলো হরহামেশাই ঘটছে। আবার এমন অনেক প্রকল্পের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যার কোনো প্রয়োজনও নেই।
এমনই একটি প্রকল্প করা হয়েছে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মান্ডার ‘শেষ মাথা’এলাকায়। আশপাশে এখনও মানুষের বসতি গড়ে ওঠেনি। নেই চলাচলের সড়কও। অথচ সেখানেই প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অভিযোগ তুলেছে, বেসরকারি একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য জনগণের করের টাকায় সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছে ডিএসসিসি। খবর প্রথম আলো।
খালের ওপর নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার, প্রস্থে ৯.৮ মিটার। সেতুতে ওঠানামা করতে ৪৫ মিটার করে ৯০ মিটার সংযোগ সড়কও রয়েছে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও এলাকা বিবেচনায় সেতু নির্মাণে এত টাকা ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সম্প্রতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটিরই একাধিক প্রকৌশলী গনমাধ্যমকে বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেই সেতুর অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ধরনের একটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী কোনোভাবেই ৩ কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত।
সেতুটি দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। ঠিক যেখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তার পাশেই শাপলা সিটি আবাসন প্রকল্প। সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর পর জমির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে খালের ওপর সেতুটি হচ্ছে, তা পার হলেই ওই আবাসন প্রকল্পের জমি।
সাঈদ খোকন মেয়রের দায়িত্বে থাকার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন যুক্ত হওয়া নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা—সাবেক এই চারটি ইউনিয়নের অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৮ সালে ৫১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় ডিএসসিসি। এ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের নথিতে সেতুর নাম লেখা রয়েছে ‘শাপলা সিটি খালের ওপর ব্রিজ’। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়।
প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ১৭টি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ১২টি সেতুর অনুমোদন দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা গনমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে পদে পদে নানা অসংগতি ছিল। মাঠ পর্যায়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে এসব দৃশ্যমান হয়েছে। মান্ডার ওই সেতুসহ ছয়টি সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকি ছয়টি সেতু না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। অবশ্য এসব সেতুর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।
চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মান্ডা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ। এখন সেতুতে ওঠানামার রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। সেতু পার হলেই শাপলা সিটি আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড। নিচু জায়গা মাটি ফেলে ভরাট করে আবাসন প্রকল্পটি করা হয়েছে। তবে প্রকল্প এলাকায় কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। আশপাশে কয়েকটি ডোবা রয়েছে। আর কিছু নিচু জমি পানিতে তলিয়ে আছে। নির্মাণাধীন সেতুটি পার হয়ে ওই প্রকল্পে ঢুকে সামান্য কিছু দূর এগোলেই আরেকটি খাল রয়েছে।
নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্থপতি ইকবাল হাবিব গনমাধ্যকে বলেন, প্রয়োজন ছাড়াই কেন মান্ডার জনবসতিহীন এলাকায় সেতু নির্মাণ করা হলো, এটি গুরুত্বসহ দেখা দরকার। তা না হলে পুরোটাই অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে পরিষ্কার বোঝা যাবে। এখন এই সেতু কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের টাকা জলে ফেলা যাবে না। এটা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। এই টাকা যদি অপচয় করে থাকে, তাহলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৭১৪
আপনার মতামত জানানঃ