বাংলাদেশে সরকারি হিসাব মতে, চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর ২০২০, বুধবার পর্যন্ত মোট ৯২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে স্বীকার করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯৩ জন। ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় নতুন করে ১৬ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে একজন রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে।
উপরোক্ত সকল তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্যমতে, গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৩ জন। যেখানে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২২০ জন। অক্টোবর মাসের পর ডেঙ্গু আক্রান্তের হার আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।
চলতি নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি। যা কিনা আগের মাসের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ। পরিসংখ্যান বলছে, বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। ঢাকাসহ এর আশেপাশের শহরগুলোতেই ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে। সে পানিতেই ডেঙ্গুর প্রজনন ঘটে। তবে এবার বছরের শেষ সময় এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে উদ্বিগ্ন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার কারণে লকডাউন ছিল। ফলে রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারেনি। চিকিৎসাও পায়নি। তাই রোগী অনেক কম দেখা গেছে। এখন লকডাউন উঠে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাড়ছে। সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ নভেম্বর, ২০২০ শনিবার মারা গেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী রনজিত দাস চৌহান। হঠাৎ করে তার পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ও অনবরত বমি হতে থাকে। ওইদিন কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকরা তার ডেঙ্গু শনাক্ত করেন। গত রবিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে সারাদেশে মানুষের মাঝে যখন ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল, তখন এর উৎস এডিস মশা নিধনে ঢাকার সিটি করপোরেশনগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেসব কর্মকাণ্ড এখন আর চোখে পড়ে না।
এ বিষয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু কেবল মৌসুমভিত্তিক রোগ না। এটি বছরজুড়ে থাকবে। আমরা বছরের শুরুতেই বলেছি করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়টি যেন ভুলে না যাই। অথচ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশনসহ যারা মশা নিধনের সঙ্গে জড়িত তার বছরজুড়ে নিষ্ক্রিয় ছিল।
ফাআ/আরা/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ