সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়নি ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসআই আকবর পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হানকে নির্যাতন এবং ওই দিন রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে তিনি নারাজ। রায়হান আহমদের মৃত্যুর মামলার প্রধান আসামি আকবরের সাত দিনের রিমান্ড শেষ হলে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্তে অনাস্থা রয়েছে অনেকেরই। ধারণা করা হয়, পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সহকর্মীদের দোষ উদঘাটনে অনীহা দেখান। এ কারণে পুলিশ দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত চান না অপরাধ ও আইন বিশেষজ্ঞরা। চলতি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জোর করে জবানবন্দি আদায়ের বেশ কিছুঘটনার প্রমাণ মিলেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জে কিশোরীকে খুনের ঘটনায় আসামিদের কথিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর ওই কিশোরীর জীবিত ফিরে আসা, চট্টগ্রামে ‘হত্যাকাণ্ডে’ গ্রেফতার আসামির স্বীকারোক্তির পর নিহত ব্যক্তির ফিরে আসা এবং বরিশালে স্বামীকে খুনের দায়ে স্ত্রীর কথিত স্বীকারোক্তির পর অধিকতর তদন্তে চোরদের হাতে সেই খুনের ঘটনার তথ্য উঠে আসায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা।
আসামী আকবরের ক্ষেত্রে এরকম কোনো ব্যাপার ঘটার সুযোগ নয়, সেটা কারো কাম্যও নয়। তবে আকবর রিমান্ডে থাকাকালে অসুস্থতার ভান করেন বিধায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এভাবে রিমান্ডের জন্য নির্ধারিত মূল্যবান সময় নষ্ট করা হয়েছে। সহকর্মীকে স্বস্তি দিতেই পুলিশ এসব করছে বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষজন। আকবর যে জবানবন্দি দেয়নি, এটা এই মামলার ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
এদিকে নিহত রায়হানের মায়ের দাবি, পুলিশ সদস্যরা এই মামলার গতিপথ ভিন্নখাতে প্রবাহিত কয়ার চেষ্টা করে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ঘটনার দিন আমার ছেলের পরনে টি-শার্ট ও নীল রঙের প্যান্ট ছিল। কিন্তু হাসপাতালে দেখা গেছে, তার পরনে লাল রঙের শার্ট। প্যান্টও বদলানো হয়েছে। আলামত নষ্ট করা হচ্ছে এখনো। এগুলো কারা করেছে? আকবরের সযোগীদের এখানে হাত থাকতে পারে, বলে মনে করেন তিনি।
১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। ফাঁড়িতে নির্যাতনের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। এরপর ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের গঠিত কমিটি তদন্ত করে নির্যাতনের সত্যতা পায়।
১৩ অক্টোবর, ২০২০ আকবর পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যান। ২৭ দিন পর ৯ নভেম্বর, ২০২০ কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ নভেম্বর আকবরকে আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার রাতে আকবর অসুস্থ বলে পিবিআইকে জানান। তাঁকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কোনো অসুস্থতা পাননি। ঘণ্টাখানেক পর আবার পিবিআইয়ের হেফাজতে নেওয়া হয় আকবরকে। মামলায় গ্রেপ্তার কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস ও এএসআই আশেক এলাহি জবানবন্দি দিলেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হননি আকবর। রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে রয়েছেন তিনি।
ফাআ/মিই/আরা/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ