গরীবের উপর ধনীদের অত্যাচারের বহু নমুনার মধ্যে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার একজন বৃদ্ধের বুকে ঘুষি দেয়া একটি। করোনাকালে অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার সময় তিনি এই কাজটি করেন। বৃদ্ধের অপরাধ, তিনি ত্রাণ হিসেবে পাওয়া কাপড়টি বদলে নিতে চেয়েছিলেন।
ত্রান দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, একজন বৃদ্ধকে ত্রানের কাপড় দেয়া হলে তিনি সেটা পাল্টানোর চেষ্টা করেন। পরের দৃশ্যতেই দেখা যায় কাদের মির্জা বৃদ্ধের বুকের বাম দিকে ঘুষি দিয়েছেন। এ নিয়ে রাত গড়িয়ে সকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড় কাদের মির্জার সমালোচনায়।
কাদের মির্জার ঘটানো এই ঘটনাটি নতুন বা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, বরং কাদের মির্জার দিক থেকে তা তার স্বাভাবিক আচরণ। রাজনীতিবিদ মানুষদের ত্রাণ দেবার সময় পর্দার পেছনের দৃশ্য বেশিরভাগ সময় এই রকমই হয়ে থাকে। ভিডিও ক্যামেরার আগে ছিল যে স্থির চিত্রের কাল, সেই সময়েও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা যে কোনও দুর্যোগে কিংবা শোক দিবসে নেতারা খাবার বা পণ্য বিতরণের সময় নেতারা মানবিক চোখ, মুখ নিয়ে ততক্ষণই থাকেন যতক্ষণ ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরা সরে গেলে মঞ্চ থেকে সরে যান নেতারাও। শুধু সরে যাওয়া নয়, তাদের হাসিখুশি অবয়বটাও হারিয়ে যায়।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা যে কোনও দুর্যোগে কিংবা শোক দিবসে নেতারা খাবার বা পণ্য বিতরণের সময় নেতারা মানবিক চোখ, মুখ নিয়ে ততক্ষণই থাকেন যতক্ষণ ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরা সরে গেলে মঞ্চ থেকে সরে যান নেতারাও। শুধু সরে যাওয়া নয়, তাদের হাসিখুশি অবয়বটাও হারিয়ে যায়।
ত্রাণ নিতে গিয়ে, খাবার খেতে গিয়ে ধস্তা-ধস্তি এবং প্রাণহানির ঘটনাও অজানা নয়। বেশিরভাগ নেতাদের মধ্যে যে উদারতা দেখা যায়, তার পুরোটা লোক দেখানো বা শীর্ষ নেতাদের দেখানোর জন্য। জনগণকে ভালোবেসে বা আদর করে মানবতার অবতার হতে নামেন না তারা। এমনও ঘটনা ঘটেছে, গণমাধ্যমের ক্যামেরা সরে যাওয়া মাত্র ত্রাণও ফুরিয়ে গেছে। গণমাধ্যম কর্মীরা বিদায় নেওয়ার পর বেরিয়ে আসে নেতা কর্মীদের স্বরূপ। রাজনৈতিক দলের প্রয়াত নেতাদের উৎসর্গ করা কাঙালী ভোজে হাসি মুখে খিচুড়ি বিতরণের দৃশ্য ধারণ শেষে, হাত বা বাসন বাড়িয়ে দেওয়া মানুষদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করার দৃশ্যও এই দেশ দেখেছে। রাজনীতি যখন আদর্শের বলয় থেকে বেরিয়ে যায় এবং শুধু ব্যক্তি উন্নয়নের জন্য প্রদর্শনে ব্যবহৃত হয়, তখন কেউই আর আদর্শের কর্মী বা নেতা থাকে না।
কাদের মির্জা যখন তুলসিপাতার রূপে আর্বিভূত হলেন, তখন অনেকেই রাজনীতির আকাশে রকমারি রঙের মেঘ, চাঁদ দেখতে শুরু করেছিলেন। পরিবর্তনের দক্ষিণা হাওয়াও শরীরে লাগাতে শুরু করেছিলেন অনেকে। গণমাধ্যমও কাদের মির্জাকে ‘লিফট’ দিয়ে তারকার উঁচু মঞ্চে তুলে দেয়। কাদের মির্জাকে রাজনীতিবীদদের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয় পথিকৃৎ এর আকার দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমের মাতম দেখে কাদের মির্জাও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নিজ ভাইকে, পুরো দলকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধে লোক ক্ষয় হয়। শুরু হয় একের পর এক নাটকের মঞ্চায়ণ। দল থেকে পদত্যাগ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেক বার একেক বয়ান দিতে থাকেন। লিফট দিয়ে তোলা নেতার পতন ঘটে। জনগণ বুঝতে পারে, সবই তার নাটক।
কাদের মির্জার লোক দেখানো ত্রান দেয়া যে মানবতা দেখানো নাটক তা বৃদ্ধকে খুশি দেবার ঘটনাতেই স্পষ্ট। এই ঘুষির মাধ্যমে বোঝা যায়, জনগণ ছাড়াই আজকাল ‘নেতাগিরি’ চলে। দলীয় আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিই মহিরুহ বেশি এখনকার গণতন্ত্রে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২১২২
আপনার মতামত জানানঃ