করোনার প্রকোপ যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, তখন তার সাথে বাড়ছে ডেঙ্গুর আক্রমণও। রাজধানীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকজন রোগীই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭৯ জন। এনাদের মধ্যে একজন কেবল ঢাকার বাইরে। গতকাল শনিবার (১০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য মিলেছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার লার্ভা মিলায় ২২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। শনিবার ডিএসসিসির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা ও জরিমানা করে আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো পরিচালনায় ছিলেন ডিএসসিসির ছয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ৪৯৪ জন বাসায় ফিরেছেন। এ বছরে এখনও সরকারি বা বেসরকারিভাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা ‘ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেল্থ’-এ একটি গবেষণাপত্র উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। সেখানে বলা বলা হয়েছে ৬০ বছরের মধ্যে এই অতিমারির কবলে পড়তে পারেন বিশ্বের অন্তত ৮৪০ কোটি মানুষ।
গবেষণা জানিয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের চলতি হারে রাশ টানতে না পারলে আর ৮০ বছর পর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক শিল্পযুগের চেয়ে ৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যথেষ্টই। আর তা হলে ১৯৭০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত বিশ্বে যত সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার চেয়ে আরও ৪৭০ কোটি বেশি মানুষ ওইসব রোগের শিকার হবেন। রোগগুলির বেশি প্রাদুর্ভাব ঘটবে শহরাঞ্চল ও নীচু জমির এলাকাগুলিতে।
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের চলতি হার বজায় থাকলে ২০৭৮ সালে বিশ্বের প্রায় ৮৪০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর কবলে পড়বেন। যা তখনকার মোট জনসংখ্যার (৯৪০ কোটি) ৮৯.৩ শতাংশ।
গবেষকরা বিভিন্ন মডেল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের চলতি হার বজায় থাকলে ২০৭৮ সালে বিশ্বের প্রায় ৮৪০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর কবলে পড়বেন। যা তখনকার মোট জনসংখ্যার (৯৪০ কোটি) ৮৯.৩ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ১৯৭০ থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭৫.৬ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যালেরিয়ায়।
একই ভাবে অতিমারির কারণ হয়ে উঠবে মশাবাহিত আরও একটি রোগ- ডেঙ্গু। আরও অনেক বেশি সংখ্যায় এই রোগের শিকার হবেন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ গুয়াম, ভানুয়াতু, পালাউয়ের মানুষ। ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠবে সোমালিয়া ও জিবৌতির মতো পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে। গুয়াতেমালা, কোস্টা রিকা এবং ভেনেজুয়েলাতেও।
তবে গবেষকরা এটাও জানিয়েছেন, ২১০০ সালে পৌঁছে যদি পৃথিবীতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ শূন্য হয়ে যায় আর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা আর ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তা হলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমবে। সে ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার শিকার হবেন বিশ্বের সাড়ে ২৩ কোটি মানুষ। আর ডেঙ্গুর কবলে পড়বেন প্রায় ২৪ কোটি মানুষ।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ