মাঝেমধ্যেই বিশাল আকারের সব পাথরখণ্ড পৃথিবীর গা ঘেঁষে চলে যায়৷ ২০১৮ সালের এপ্রিলে ২০১৮জিইথ্রি নামের ৫০ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু বিপজ্জনকভাবে পৃথিবীর কাছে চলে আসে৷ মাত্র ২১ ঘণ্টা আগে জ্যোতির্বিদরা এটির উপস্থিতি টের পান৷ এরও পাঁচ বছর আগে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি উল্কা রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে আঘাত হানে৷ আকারের তুলনায় বিপর্যয় কম মাত্রারই হয়েছিল৷ কয়েক হাজার বাড়িঘর এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন৷ তবে ভাগ্যক্রমে এর আঘাতে কেউ প্রাণ হারাননি৷
এদিকে, গ্রহাণু নিয়ে আবারও চিন্তিত গোটা পৃথিবী। কীভাবে থামানো যায় তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। পৃথিবীর কক্ষপথের দিকে এগিয়ে আসা ‘বেনু’ নামের একটি গ্রহাণুর পথ বদলাতে রকেট ছোড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন চীনের গবেষকেরা। চীনের ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স সেন্টারের বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে গ্রহাণুটি অনেক দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে চীনের তৈরি ২৩টি লং মার্চ ৫ রকেট ছুড়তে হবে।
এই ৭ দশমিক ৮ কোটি টনের গ্রহাণুটি আগামী ১৫০ বছরে পৃথিবীর কক্ষপথের ৭৫ লাখ কিলোমিটারের মধ্যে আসবে। শুনতে খুব একটা উদ্বেগজনক মনে না হলেও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না গবেষকেরা। কারণ, বেনু যে পাথরে তৈরি, তা পৃথিবীতে আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীকে বেনু আঘাত করবে, সে আশঙ্কা ২ হাজার ৭০০ বারের মধ্যে ১ বার। তবে আঘাত হানলে এতটাই ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে যে বিজ্ঞানীরা সে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।
বেনু একটি কার্বন সমৃদ্ধ গ্রহাণু। খুবই অন্ধকার। সূর্যের আলোর ৩০ শতাংশ প্রতিফলিত হয় পৃথিবী থেকে। বেনু থেকে হয় মাত্র ৪ শতাংশ। ফলে এটাকে দেখা বেশ শক্ত কাজ। পৃথিবী থেকে ২৯.৩ কোটি কিলোমিটার দূরের এই অন্ধকার কালো গ্রহাণুটির খোঁজ মিলেছিল ১৯৯৯ সালে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীকে বেনু আঘাত করবে, সে আশঙ্কা ২ হাজার ৭০০ বারের মধ্যে ১ বার। তবে আঘাত হানলে এতটাই ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে যে বিজ্ঞানীরা সে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।
সূত্র মতে, লং মার্চ ৫ রকেট দিয়ে গ্রহাণুর পথ বদলানোর প্রস্তাবটি এসেছে জ্যোতির্বিজ্ঞান জার্নাল ইকারাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে। এমন গবেষণাপত্র অবশ্য এটাই প্রথম নয়। পরীক্ষামূলকভাবে দুটি গ্রহাণুর কক্ষপথ বদলাতে চলতি বছরের কোনো একসময় স্বয়ংক্রিয় নভোযান পাঠানোর কথা রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার।
এমনকি পৃথিবীর কাছাকাছি এলে বেনু গ্রহাণুর জন্যও সম্ভাব্য সমাধান ভেবে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে অন্তত ২৫ বছর লেগে যাবে, খরচও বেশি। অন্যদিকে চীনের প্রস্তুতিপর্বের জন্য বছর দশেকের কথা বলা হচ্ছে।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী পারমাণবিক অস্ত্রের সাহায্যে গ্রহাণুগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তবে তাতে বড় ঝুঁকি আছে। কারণ, গ্রহাণু ভেঙে দিলে ছোট ছোট কণাও পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। এর চেয়ে বরং অনেকগুলো রকেট ছোড়াই বেশি যুক্তিযুক্ত।
এদিকে, বেনুর নমুনা সংগ্রহের জন্য নাসা এরই মধ্যে নভোযান পাঠিয়েছে। ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামের মহাকাশযানটির ২০২৩ সালে পৃথিবীতে ফেরার কথা রয়েছে। মূলত বেনুতে কী আছে, ভাল করে জানার জন্য ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামের যান পাঠিয়েছিল নাসা। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সেটি বেনুতে খোঁড়াখুঁড়ি চালায়। সংগ্রহ করে এক কেজি পাথর-ধুলোর নমুনা। যা পৃথিবীতে এসে পৌঁছবে ২০২৩ সালে।
‘ওসিরিস-রেক্স’ এই খোঁড়াখুঁড়ি করার আগে ২০১৯-এর ৭ মার্চ ও পরে ২০২১-এর ৭ এপ্রিল খননস্থলের ছবি তুলেছিল। ছবিতে দেখা যায়, বেনুর গায়ে যে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, তা বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আগে ও পরে তোলা ছবির তুলনা করে। দেখা গিয়েছে, অন্তত এক টন ওজনের একটি পাথরের বোল্ডার প্রায় ৪০ ফুট সরে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ