অন্যায়যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী মার্কিন সেনারা কি বিবেকের দংশনে জর্জরিত? মানুষ হত্যার মর্মপীড়ায় জ্বলে শেষ আশ্রয় খুঁজছেন মৃত্যুর কাছে? পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। গত এক দশকে প্রায় ৩০ হাজার ১৭৭ জন মার্কিন নিয়মিত এবং যুদ্ধ-ফেরত সেনা আত্মহত্যা করেছে যেখানে যুদ্ধের কারণে মারা গেছে ৭ হাজার ৫৭ জন সেনা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণা রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে। গত সোমবার (২১জুন) ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’ শিরোনামে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। খবর এনবিসি নিউজ।
মার্কিন সামরিক বাহিনী সেনাদের আত্মহত্যার কোন খবর প্রকাশ করে না। এ বিষয়ে করা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়।
গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের যুদ্ধের কারণে যত সেনা মারা গেছে, তার চেয়ে চারগুণ সেনা মারা গেছে আত্মহত্যায়।
এতে বলা হয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার ১৭৭ জন মার্কিন নিয়মিত এবং যুদ্ধ-ফেরত সেনা আত্মহত্যা করেছে যেখানে যুদ্ধের কারণে মারা গেছে ৭ হাজার ৫৭ জন সেনা। মার্কিন সেনা মৃত্যুর এই হারের চেয়ে আত্মহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা নিহতের সংখ্যা ৪ দশমিক ২৮ ভাগ বেশি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ শুরু করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কর্তব্যরত অবস্থায় ৫ হাজার ১১৬ জন সেনা আত্মহত্যায় মারা গেছেন।
২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল গার্ডের ১ হাজার ১৯৩ জন রিজার্ভ সেনা আত্মহত্যা করেছেন। এই দুই বিভাগের আত্মহত্যার বিষয়ে ২০১১ সালের আগের কোনো রেকর্ড নেই।
এ বিষয়ে মার্কিন সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, আমাদের সামরিক বিভাগের লোকজনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং কল্যাণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। সময়ের পরিক্রমায় আমেরিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রণতা বেড়েছে। সমাজে যা ঘটছে তা থেকে আমাদের সেনা সদস্যরা মুক্ত নয়।
জানা গেছে, আমেরিকার বহু প্রতিষ্ঠান ও প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন এই বিষয়ে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না। যা কিনা ক্রমশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তারা নিজ চোখের সামনে এত বেশি মৃত্যু দেখেছে যে, মৃত্যুকে তাদের কাছে আর অস্বাভাবিক কিছু বলে মনে হয় না। বরং তাদের মনে এমন ধারণা জন্মে গিয়েছে যে, মৃত্যুই পারে যেকোনো সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান বয়ে আনতে। আর যেহেতু সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সুবাদে তাদের মনোবল গড়পড়তা মার্কিন নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ়, তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, একজন মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষে সর্বোচ্চ একটি বা দুটি নিকটবর্তী বিস্ফোরণের চাপ সহ্য করা সম্ভব। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যারা যুদ্ধ করতে গিয়েছিল, তারা প্রায় সকলেই এর অনেক বেশি নিকটবর্তী বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়েছে, যা তাদের মস্তিষ্ককে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বারবার বিস্ফোরণের চাপ সহ্য করায় তাদের মস্তিষ্ক হয়তো স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, যে কারণে তারা ভালো-মন্দ চিন্তা না করে আত্মহত্যা করে ফেলছে।
কেবল যে যুদ্ধ ফেরত সেনারাই এই পথ বেছে নিচ্ছে তা নয়। সেনাবাহিনীর মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে আত্মহত্যাকারীদের এক-তৃতীয়াংশকে কখনো কোনো যুদ্ধেই পাঠানো হয়নি। এরপরেও কেন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ