তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মঙ্গলবার আজারবাইজান সফর করেছেন। এ সময় তিনি তুরস্কসহ ৬টি দেশ নিয়ে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার বলয় গড়ার ওপর জোর দেন।
এরদোগান বলেন, এ অঞ্চলে একটি নিরাপত্তাবলয় গড়তে তিনি তুরস্ক, রাশিয়া, ইরান, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াকে নিয়ে একটি প্লাটফরম তৈরি করতে চান। ২৮ বছর পর আজারবাইজান আর্মেনিয়ার কাছ থেকে ঐতিহাসিক সুসা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর প্রথম কোনো বিদেশি নেতা হিসেবে শহরটি পরিদর্শন করেন এরদোগান।
তিনি সুসা এলাকা পরিদর্শন করে এর পুনর্গঠনের আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সামরিক বলয় গঠন করবেন।
আর্মেনিয়ার কাছ থেকে মুক্ত হওয়া আজেরি ভূখণ্ড সুসা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চায় আঙ্কারা। এ ছাড়া এই সফরে এরদোগানের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আজেরি প্রেসিডেন্ট এলহাম আলিয়েভও উপস্থিত ছিলেন। গত বছর তুরস্কের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কারাবাখ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় আজারবাইজান।
আজারবাইজান সফরে স্ত্রী ছাড়াও এরদোগানের সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার, তুর্কি সরকারের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক ফাহরেতিন আলতুন, প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন, ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা একে পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক এবং ন্যাটো পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলিতে তুর্কি প্রতিনিধিদলের প্রধান ওসমান আকান বাক।
এদিকে জার্মানিতে তুরস্কের ড্রোন হামলা হলে দেশটির সেনাবাহিনী সেই ড্রোন হামলা ঠেকাতে সক্ষম হবে না। জার্মানিভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মনুষ্যবিহীন ড্রোন বাজার পর্যালোচনা এবং গত বছর নাগরনো-কারাবাখ যুদ্ধে ড্রোনের ভূমিকা পর্যালোচনা করে এমন মন্তব্য করেছে।
জার্মানির প্রতিরক্ষা ইনস্টিটিউটের আধুনিক যুদ্ধবিদ্যা বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাইকেল কার্ল বলেন, মারাত্মকভাবে বলতে গেলে, যদি জার্মান সেনাদের আজারবাইজানের ওই যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হতো, তাহলে তারা দাঁড়াতেই পারতো না। তিনি বলেন, আজারবাইজান যুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, এমন কম্বাট ড্রোন এবং কামিকাযি ড্রোন হামলা হলে জার্মানির সেনাবাহিনী কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে না।
আমাদের সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষার ঘাটতি আমাদের সর্বনাশের কারণ হবে। গত বছর নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান ৪৩ দিনের যুদ্ধে জড়ায়। এই যুদ্ধে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে অনেক অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয় আজারবাইজান। এর কৃতিত্বের বড় অংশে ছিল তুরস্ক এবং ইসরাইলের তৈরি ড্রোন। আর্মেনিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে আজারবাইজান তুরস্কের বেয়ারআকতার ড্রোন ব্যবহার করে। জার্মানির ওই সমরবিদ বলেন, আধুনিক যুদ্ধে জিততে হলে জার্মান সেনাদের প্রযুক্তি প্রয়োজন।
জার্মান বাহিনীতে প্রযুক্তি থাকলেও সেসব প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করে না। তিনি আরও বলেন, কামিকাযি হলো একধরনের আত্মঘাতী বিমান- যেগুলো বিস্ফোরক অস্ত্রে সজ্জিত থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত করে নিজেই বিস্ফোরিত হয়ে যায়। এটা ড্রোন প্রযুক্তির নিখুঁত উন্নতি।
উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তুরস্কের সশস্ত্র ড্রোনের প্রশংসা করেছে স্পেনও। একটি স্প্যানিস গণমাধ্যমের একটি নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘তুরস্কের ড্রোনগুলো বিশ্ব জয় করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের জঙ্গি ড্রোনগুলো আসাদ বাহিনীর আক্রমণকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিহত করেছে। এছাড়া তুরস্কের ড্রোনগুলো লিবিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা খলিফা হাফতারকে বাধ্য করেছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সঙ্ঘাত থেমে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৪৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ