জাপানে শিশু জন্মহার কমে যাচ্ছে। প্রায় চার দশক ধরে এই প্রবণতা জাপানে বিদ্যমান থাকলেও এ বছর শিশু জন্মহার সর্বনিম্নে নেমে যায়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই হ্রাস পেয়েছে বলে জানা যায়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে শিশু জন্মহার কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। যা ১৮৯৯ সালের পর থেকে জাপানে সর্বনিম্ন জন্মহার।
মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর ১ এপ্রিল জাপানে মোট শিশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার। ১৪ বছর পর্যন্ত যাদের বয়স, জাপানে তারা শিশু হিসেবে গণ্য। ১ বছর আগের তুলনায় শিশুদের সংখ্যা জাপানে ১ লাখ ৯০ হাজার কমে গেছে। এই হিসাব বলছে, ১৪ বছরের বেশি যাদের বয়স হয়েছে, এই তালিকার বাইরে তারা চলে গেলেও নবজাতকের আবির্ভাব তা কোনো অবস্থাতেই পূরণ করতে পারেনি।
দেশের মোট জনসংখ্যায় শিশুদের হারের হিসাবের দিক থেকেও ৪৭ বছর ধরে পতন দেখা গেছে জাপানে। এই হার এখন মাত্র ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ৩৩টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী দিনের সমাজের জন্য পরিষ্কারভাবেই সমস্যার ইঙ্গিত এর মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়। অন্যভাবে জাপানের সমাজে আরও বেশি বৃদ্ধ হয়ে আসার প্রতিফলন এই হিসাব আরও পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত অর্থবছরে জন্ম নেওয়া নবজাতকের মধ্যে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ছিল বালক এবং ৭২ লাখ ৮০ হাজার ছিল বালিকা। শিশুজন্ম এ বছর এতটা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারির সরাসরি কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তার কোনো উল্লেখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি। তবে সমাজ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, অনিশ্চিত সময়ে পারিবারিক বন্ধন অটুট থেকে গেলেও বিশেষ করে সদ্য বিবাহিত অনেক দম্পতি সন্তান গ্রহণ করা থেকে বিরত আছেন। কারণ হিসেবে তরুণ চাকরিজীবীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সেবা খাতে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে আসাকে তারা দায়ী করছেন।
করোনা মহামারিতে জাপানে বিয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ধারণ করা হচ্ছে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, গত বছর দেশটিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে রেজিস্ট্রেশনকৃত বিয়ের সংখ্যা। এছাড়া জাপানে শিশু জন্মদানে সক্ষম এমন নারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। এ সংখ্যা পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন।
গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী জাপানে। ফলে দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন অনেকে। জাপানকে বলা হয় সুপার এজড জাতি। কারণ এখানকার ২০ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪০ লাখ। তবে ২০৬৫ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়াতে পারে আট কোটি ৮০ লাখে।
করোনা মহামারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় সেবা খাতকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে এবং এই খাতে কাজ করা নারীদের মধ্যে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এই দলভুক্ত কম বয়সের বিবাহিত নারীরা স্বভাবতই সীমিত আয়ের সংসারে নতুন মুখের আগমন নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী নন। ফলে এর প্রতিফলন এসে পড়ছে দেশের জনসংখ্যার সার্বিক হিসাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াও জনসংখ্যা হ্রাস নিয়ে লড়াই করছে। দেশটিতে গত বছর জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার ছিল বেশি। এছাড়া সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনেও কমতির দিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
চলতি বছরের মে মাসে সরকারি হিসাব মতে, ১৯৬০ সালের পর থেকে চীনে জনসংখ্যা উৎপাদন সর্বোচ্চ হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে দুই সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে এবার তিন সন্তান নীতি গ্রহণ করে দেশটি। ২০১৫ সালে চীনে এক সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে আসলেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি দেশটির জনসংখ্যা। চীনের সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্যমতে, গত বছর চীনে এক কোটি ২০ লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ