যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৩ সাল পর্যন্ত ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। এই সময় পর্যন্ত এই দুইটি মাধ্যমে তাকে নিষিদ্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জারি থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফের ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে ফেরার সুযোগ পাবেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতা চালাতে সমর্থকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে নিষিদ্ধ হন ট্রাম্প। ট্রাম্প সমর্থকদের সেদিনের সেই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভিত কেঁপে উঠেছিল।
এই ঘটনার পর ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হওয়া ওই অ্যাকাউন্টটিতে ট্রাম্পের প্রায় নয় কোটি অনুসরণকারী ছিলেন। অপরদিকে নিজেদের প্লাটফর্মে ট্রাম্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে ফেসবুক।
তবে শুক্রবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী দুই বছরের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে যদি ‘জনগণের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি কমে’ তাহলে তাকে ফের এই প্লাটফর্মে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
শুক্রবার ফেসবুকের ওয়েবসাইটে ব্লগ পোস্ট করে জানানো হয়েছে, বড় ধরনের সহিংসতা বা সংকটকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের (পাবলিক ফিগার) আচরণের বিষয়টি ফেসবুকের নতুন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতিমালার নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিভিন্ন মেয়াদে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হবে। প্রথমে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে। প্রতিটি সময়কালের শেষে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে।
ট্রাম্পকে নিষিদ্ধের এই বিষয়টিও সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেসবুত ব্যবহার করে যেসব বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ভবিষ্যতে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সংকটের সৃষ্টি করলে কীভাবে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এই ঘোষণায় তার ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কি ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালুর অনুমতি দেবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফেসবুকের ওভারসাইট বোর্ড বলেছে, জানুয়ারিতে ক্যাপিটল ভববনে হামলা ও সহিংসতার সময় ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরিয়ে রাখা বা না রাখা নিয়ে স্পষ্ট যুক্তির অভাব ছিল। কিন্তু শুক্রবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের ‘শাস্তির’ বিষয়টি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ফেসবুকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেন, যে কোনো শাস্তি আমরা দিই বা না দিই-সেটাই বিতর্কিত হয়ে উঠবে। অনেকে বিশ্বাস করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এভাবে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পকে এখনই সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরোধীদের থেকে আজকের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হবে, সেটও আমরা জানি। কিন্তু আমাদের কাজ, যতটা সম্ভব স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উস্কানিতে তার সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে ব্যাপক হামলা চালায়। উদ্দেশ্য ছিল গত বছরের নির্বাচনের ফল বদলানো। ট্রাম্প ফল ঘোষণার পর থেকেই দাবি করে আসছিলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।
ক্যাপিটল হিলে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জানুয়ারি ট্রাম্পকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ বলেছিলেন, ‘এ সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমাদের সেবা ব্যবহার করতে দেওয়ার ঝুঁকি এক কথায় অনেক বেশি।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ