ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগযোগমাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে আইনের আওতায় আনতে চায় সরকার। অপপ্রচার, বিজ্ঞাপনের অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই সরকারের এই প্রচেষ্টা। এদিকে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ‘অস্বাভাবিক অফার’ নিয়ে প্রচারণা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
আজ বুধবার (২ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ষষ্ঠ সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত (ভার্চুয়ালি ও সশরীরে) ছিলেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, গুগল ও অ্যামাজন ভ্যাটের আওতায় এসেছে। রেজিস্ট্রেশন করেছে। অন্যান্য যারা করেনি তারাও রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসুক আমরা এটা চাই। অনেকেই ভালো কাজ করছেন। কিন্তু কেউ কেউ মিথ্যাচার করছে। এটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য হুমকিস্বরূপ। ইউটিউব, ফেসবুকের রেজিস্ট্রেশন থাকলে আমরা ধরতে পারব। এখন কে কোথা থেকে কী করে পাওয়া যায় না। তখন যিনি অপরাধ করবেন তিনি জবাবদিহিতার আওতায় আসবেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, এ জন্য আমরা বলেছি সবাই যেন রেজিস্ট্রেশন করে। আইনের আওতায় আসুক। তারা তাদের স্বাধীনমতো কাজ করুক। সংবাদ আদান-প্রদানে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপই সরকার করবে না।
তিনি বলেন, ‘একইভাবে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককেও নির্দেশনা দিয়েছি, (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) যারা বিজ্ঞাপন দেয়, তারা টাকাটা কীভাবে দেয়। বাংলাদেশে যারা আছে, তাদের হিসাবটা পাওয়া যাবে। কিন্তু বিদেশে যারা বিজ্ঞাপন দেয়, যাদের রেজিস্ট্রেশন নাই… আর বিনা পয়সায় তো কেউ বিজ্ঞাপন প্রচার করে না। করলে তো সবারটা করত। তারা কারা যেসব কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেয়, ওনারা কীভাবে দেয়- সেই তথ্য আগামী সভায় উপস্থাপন করতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা কীভাবে অর্থ পরিশোধ করে সেই তথ্যও খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যাদের বিজ্ঞাপন যায়, কীভাবে যায় এবং বিজ্ঞাপনের টাকা সেই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে পেমেন্ট করে; সেটা কি লিগ্যালি করে, নাকি ইলিগ্যালি করে, ব্যাংকের মাধ্যমে যায়, নাকি হুন্ডির মাধ্যমে যায়- সেটা আমরা জানতে চেয়েছি। পরবর্তী সভায় সেই তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’
দেশে এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের একটা অফিস থাকাও দরকার বলে মনে করছে সরকার।
তিনি বলেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা বিজ্ঞাপন দেয় কীভাবে টাকা পরিশোধ হয় সেটা বৈধ পথে যায় কি না, এসব তথ্য জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুগলের অফিস বাংলাদেশে না থাকায় অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাংলাদেশে অফিস করার অনুরোধ করেছি। যদি অফিস না করে বিকল্প কী করা যায় সেটা ভাবা হবে। আমরা চাই, সবাই আইনের মধ্যে থাকুক।
আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘ইউটিউব, গুগল এসবের অফিস আমাদের এখানে না থাকার কারণে আমার মনে হয় অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। আমাদের দেশে এত বেশি কাস্টমার, এগুলোর ব্যবহারকারী ফলে এখানে অফিস থাকা খুবই লাভজনক হবে। তারা যদি এই কথা না শোনে, তাহলে পরবর্তীতে আমরা ভেবে দেখব কী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ অব্যাহত থাকবে। ভারতে তাদের অফিস আছে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশেও যাতে তাদের অফিস থাকে। যাতে কোনো অন্যায় হলে আমরা বলতে পারি।’
নজরদারিতে ই-কমার্স
আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘অনলাইন ব্যবসা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, একটা ফ্রিজের দাম দেড় লাখ টাকা, কিন্তু অফার দেয়া হচ্ছে ৮০ হাজার কিংবা ৭৫ হাজার টাকায় দেব। হয়তো ১০-২০ জনকে দেয়ও। ৫০০ মানুষ আবেদন করবে, তাদের বলবে অমুক দিন দেব। আমরা আশঙ্কা করছি, হয়তো সে গা ঢাকা দেবে। যেটা যুবক (যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি) করেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটা আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আইন মন্ত্রণালয়কে বলেছি, একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক কথা যারা বলে তারা কারা? তাদের সুনির্দিষ্ট ডাটা রাখা, তারা যাতে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যেতে না পারে। অগ্রিম সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। তারা যেন যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অনেকে ২০ শতাংশ হারে সুদ দেয়ার কথা বলে। এরা হয়তো ২০০-৩০০ মানুষকে দেবে, বাকিটা নিয়ে গা ঢাকা দেবে, আমরা এটা আশঙ্কা করছি। এই ধরনের অস্বাভাবিক কথা বলে যারা বিজ্ঞাপন দেয়, পুলিশ যেন তাদের নজরদারিতে আনে। সরকারি রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে জনগণকেও সতর্ক করতে চাচ্ছি যে, এসব ফাঁদে পা দেবেন না।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ