গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের অভিযোগে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রাসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত করছে দেশটির সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন।
এক নির্বাচন কমিশনারের উদ্ধৃতির বরাত দিয়ে ‘মিয়ানমার নাউ’ সংবাদমাধ্যম আজ শুক্রবার(২১ মে) এই খবর দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে এনএলডির নিবন্ধন বিলুপ্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে এনএলডিসহ দেশটির অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ওই বৈঠক বর্জন করে।
সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিল না সু চির দল এনএলডিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
বৈঠকে জান্তাসমর্থিত নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান থেইন সোয়ে বলেন, গত বছরের নির্বাচনে এনএলডি ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা ওই দলটির নিবন্ধন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। যারা এই জালিয়াতির হোতা আমরা তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব।
থেইন সোয়ে বলেন, ‘এনএলডির বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। যেহেতু আইন অনুযায়ী এই ধরণের কর্মকাণ্ড অবৈধ, তাই আমরা এনএলডির নিবন্ধন বাতিল করতে যাচ্ছি।’
তবে জান্তা সরকারের মুখপাত্র এবং এনএলডি ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ নিয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মিলিটারি সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বলেছে, তারা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছে। তবে এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত এখনও জানতে পারেনি।
মিয়ানমারে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারে সামরিক বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এনএলডির বেশ কয়েকজন দলছুট নেতা-কর্মীও রয়েছেন। এমন একজন মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে ওই মুখপাত্র তাৎক্ষনিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তারপর সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির উচ্চ পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গেও এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে রয়টার্স; কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, মতবিনিময় সভায় তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে, ওই প্রতিনিধি এ ব্যাপারে বলতে পারবেন। তিনি এখনও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু জানেন না।
১৯৮৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সু চির নেতৃত্বে গঠিত দল এনএলডি কয়েক দশক ধরে আন্দোলন চালিয়ে অবশেষে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফের বিজয়ী হয় তারা।
মিয়ানমারে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন এনএলডি বিপুল জয় পায়। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়। কিন্তু এই নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর অভিযোগ নাকচ করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অজুহাতে দেশটির সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান করে। তারা সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাতের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে।
এদিকে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা ভালোভাবে নেয়নি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণ। তারা সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে রাজপথে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। সামরিক সরকার প্রতিবাদী জনগণের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৮০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ