বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বের মোট খাদ্য উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়, যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছিও বৃদ্ধি পায় তবে এশিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার সুদানো ও সাহেলীয় অঞ্চলে চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্ত্বেও এখনো এসব অঞ্চল শস্য উৎপাদনের ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক জার্নাল ওয়ান আর্থে গত শুক্রবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা বলেছেন, বর্তমানে শস্য উৎপাদনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর ৯৫ শতাংশ ‘জলবায়ু নিরাপদ অঞ্চল’ অথবা ‘পরিবেশের’ মধ্যে পড়ে। তাপমাত্রা যদি ৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়, তাহলে এই অঞ্চলগুলোর অনেক স্থানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনের এই অঞ্চলগুলো ব্যাপকভাবে সংকুচিত হবে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং আফ্রিকার সুদানো-সাহেলিয়ান অঞ্চল।
অপর দিকে কিছুটা আশার খবরও দিয়েছেন গবেষকেরা। তারা বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ যদি কমানো যায় এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যায়, তাহলে বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন অঞ্চলগুলোর মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশ ঝুঁকিতে পড়বে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যত কমানো যাবে, ততই মঙ্গল হবে মানবজাতির জন্য।
গবেষণায় আরেকটি চিত্রও ফুটে উঠেছে। ইউরোপের নর্ডিক অঞ্চলের মতো শীতপ্রধান অঞ্চলে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেসব অঞ্চল খাদ্য উৎপাদনের অনুকূল হবে, কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এসব অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন যতটা বাড়বে, তা অন্য অঞ্চলে উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণের তুলনায় নগণ্য।
গবেষণার প্রধান লেখক ও আলতো ইউনিভার্সিটির বৈশ্বিক খাদ্য ও পানিবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক মাত্তি কুম্মু বলেছেন, ‘জলবায়ু সংকটে বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়বে। জলবায়ু নিরাপদ অঞ্চল ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়ে আসার আভাস আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের। কিন্তু আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারি আমরা। এ ছাড়া ঝুঁকির প্রভাব কমাতে এবং সহনশীলতা ও অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন ও সমাজকে শক্তিশালী করা উচিত।’
মাত্তি কুম্মু বলেছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পশুপালনের পাশাপাশি খাদ্যশস্য উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। অনেক এলাকায় ব্যাপক আকারে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্যগুলোর মধ্যে ২৭টি এবং সাত ধরনের গবাদিপশুর ওপর প্রভাব হবে মারাত্মক।
কুম্মু আরও বলেছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরও কিছু অঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়বে, যেখানে বর্তমানে খুব কম উৎপাদন হয়। এসব অঞ্চলের মধ্যে শীতপ্রধান অঞ্চল নর্ডিক রয়েছে। এ ছাড়া চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের কারণে দেখা দেবে তীব্র খরা। এতে বিশ্বজুড়ে ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি জায়গা মরুভূমিতে পরিণত হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ