ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার (১১মে) বেলজিয়ামের আদালতে মামলাটি করেছে ইইউ। এই মামলার ফলে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির জরিমানা গুনতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, ইইউর অভিযোগ ভিত্তিহীন; কারণ কোম্পানি চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি।
এর আগে গত এপ্রিলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা করে ইইউ। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে বিলম্ব করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে মঙ্গলবারের মামলায় অভিযোগ করেছে ইইউ।
মামলার বিবরণীতে ইইউ কমিশনের মুখপাত্র জানান, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অ্যাস্ট্রেজেনেকা চলতি বছরের প্রথম ভাগে ১২০ মিলিয়ন ডোজ, আর আসছে জুনের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করবে। কিন্তু প্রথম ভাগে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডোজ ইইউকে দিলেও জুনের মধ্যে বাকি ভ্যাকসিনের সরবরাহ করা যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে পুরোপুরিই অসম্ভব হবে সেটি নিশ্চিত হয়েই মামলার সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ কমিশন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার আইনজীবী জানান, এই মামলার কোনো প্রয়োজনই নেই। এ-সংক্রান্ত একটি মামলা চলমান রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ইইউকে ৩০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার। তবে তারা ৫ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে।
এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইইউ কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত বলছেন জার্মানির সাধারণ নাগরিকেরা। জার্মানির এক নাগরিক বলেন, দেখুন অ্যাস্ট্রাজেনেকা শুরু থেকেই চুক্তির কোনো তোয়াক্কা করেনি। যে পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল দেয়নি। তারওপর ভ্যাকসিনটির গবেষণা অপরিপক্ক। মস্তিষ্কেও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তজমাট বাঁধার বিষয়টিও পরিষ্কার। তাই ইইউর মামলার সিদ্ধান্তটা সঠিক। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনের শেষের দিকেই ঘোষণা হতে পারে আলোচিত এই মামলার রায়।
যদিও ইইউর দ্বিতীয় মামলার বিষয়ে ইইউয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, এই মামলাটি আসলে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তেমন কিছু নয়।
অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুতে টিকাদান
টিকা নেওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর জেরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনারোধী টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে ব্রাজিল। অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার মৃত্যুর সঙ্গে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। যার জেরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রাজিলিয়ান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
ব্রাজিলের টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয়ক ফ্রান্সিয়েল ফ্রান্সিনাতো জানিয়েছেন, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আনভিসার পরামর্শের ভিত্তিতে মঙ্গলবার থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে সিনোভ্যাক ও ফাইজারের টিকার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী ২৩ সপ্তাহের অন্তসত্ত্বা ছিলেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। টানা পাঁচদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সোমবার মারা যান ওই নারী। তার হেমোরেজিক স্ট্রোক (রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক) হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এক বিবৃতিতে আনভিসা বলেছে, ওই নারীর হেমোরেজিক স্ট্রোকের সঙ্গে টিকা ব্যবহারের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বলেছে, তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্তসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। প্রাণীদের ওপর চালানো পরীক্ষায় গর্ভাবস্থা ও ভ্রূণের বিকাশে ক্ষতি হওয়ার মতো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ