রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণে ১১ দফা নিয়ম অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ জনস্বার্থে এ রায় দেয়।
আদালত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আটটি জীবনরক্ষাকারী ভেন্টিলেটর ক্রয় করার ১২ বছর পরও স্থাপন না করায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক তিন পরিচালক ও আইসিইউ বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। রায়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে দুদকের দেয়া সুপারিশমালার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভেন্টিলেটর নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। এরপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রুল জারি করেছিল। আজ হাইকোর্ট সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণে যে ১১ দফা নিয়ম অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো হলো-
চিকিৎসার জন্য যেকোনো যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। এ কমিটি দ্বারা চাহিদা নিরূপণ করে সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুসারে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বা যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। চাহিদা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে উক্ত চাহিদাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন কি না তা নিরূপণ করতে হবে। অবকাঠামো প্রস্তুত হওয়া সাপেক্ষে যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক উপযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবাস্তব ও অতিমূল্য নির্ধারণ করে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক ও বাস্তবসম্মত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি বুঝে নেয়ার পূর্বে সরবরাহকৃত পণ্যের মান ও গুণ নিশ্চিত হতে হবে। জরুরিভিত্তিতে কোনো যন্ত্র ক্রয় ও চালু করার ক্ষেত্রে একইভাবে ১ ও ২ নম্বর শর্ত পূরণ করতে হবে।
প্রতিটি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রীর যথাযথ মান নিরীক্ষা, যন্ত্রপাতিগুলো কার্যকর ও সচল রাখার বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করতে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। কোনো যন্ত্রপাতি মেরামত কিংবা ওভার হোলিংয়ের প্রয়োজন হলে অবশ্যই উক্ত যন্ত্রপাতি চালু ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা অবিলম্বে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিতভাবে জানাবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তদারকির জন্য গঠিত কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।
এ বিষয়ে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দায় নির্ধারণ করবে এবং কোনো আর্থিক ক্ষতি হলে যার কারণে ক্ষতি হবে তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। প্রতিটি স্থাপিত যন্ত্রের কক্ষের বাইরে উক্ত যন্ত্রের কর্মক্ষমতা ও মেয়াদকাল লিখিতভাবে উল্লেখ করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে হবে। যন্ত্রপাতিগুলোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলেও রায়ে বলা হয়েছে।
খবর : ইউএনবি
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ