অবশেষে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছে বহুল আলোচিত সেই চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ। ৯ মে রবিবার সকালে মালদ্বীপের কাছে ভারত মহাসাগরে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে আছড়ে পড়ে এটি। রবিবার বেইজিং-এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, রকেটের ধ্বংসাবশেষের ওই অংশটি আছড়ে পড়ার আগে বায়ুমণ্ডলে থাকা অবস্থাতেই এর বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানাচ্ছে, লং মার্চ ফাইভবি ইয়ো-২ নামের এই রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ সময় সকাল আটটা ২৪ মিনিটের সময়। তবে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চীনের নতুন মহাকাশ স্টেশনের প্রথম মডিউল হিসেবে গত ২৯ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয় মার্চ ফাইভবি ইয়ো-২ নামের ওই রকেটটি। এর ১৮ টন ওজনের মূল অংশটি এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। রকেটটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোথায় আছড়ে পড়ে এ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও বেইজিং অবশ্য এর ভীতিকে খাটো করেই দেখিয়েছে। তাদের দাবি ছিল, এতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি খুবই কম। কেননা, রকেটের বেশিরভাগ উপাদানই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময়ই নষ্ট হয়ে যাবে। এখন বাস্তবেও তাদের এমন দাবির প্রতিফলন ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তথ্য গ্রহণ করে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা স্পেস-ট্রাক রকেটের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করেছে। একটি টুইট বার্তায় সংস্থাটি বলছে, ”যারা লং মার্চ ফাইভবি-র পৃথিবীতে প্রবেশের বিষয়টি নজরদারি করছিলেন, তারা সবাই এখন আরাম করতে পারেন। রকেটটি ধ্বংস হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছিলেন যে, রকেটের টুকরোগুলো পৃথিবীর সমুদ্রেই পড়তে যাচ্ছে, যেহেতু পৃথিবীর ৭০ শতাংশই পানি। তবে অনিয়ন্ত্রিত এই রকেটের পৃথিবীর দিকে আসার ঘটনায় অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, কারণ সেটি ক্ষয়ক্ষতি বা কাউকে হতাহত করতে পারে। যদিও সেই সম্ভাবনা খুব কমই ছিল।
কক্ষপথ থেকে রকেট পড়ে যাওয়ার জন্য চীনের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। গত বছর আরেকটি লং মার্চ রকেটের একটি টুকরো পড়েছিল আইভরি কোস্টের একটি গ্রামে, যেখানে কোন হতাহত না হলেও স্থাপনার ক্ষতি হয়েছিল।
এএফপি জানাচ্ছে, হার্ভার্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডয়েল একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন, পরিসংখ্যানগত ভাবে সাগরে পড়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি ছিল। দেখা যাচ্ছে, চীন এই জুয়ায় জিতে গেছে, (যদি না আমরা মালদ্বীপে টুকরো পড়ার খবর পাই)। তারপরেও এটা একটা দায়িত্বহীন ব্যাপার। এর আগে ম্যাকডয়েল মন্তব্য করেছিলেন যে, এ ধরনের ঘটনা এড়াতে চীনের উচিত তাদের লং মার্চ-ফাইভবি রকেটের পুনঃনকশা করা।
এর আগে ২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে চীনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্টেশন চালুর লক্ষ্যে গত ২৯ এপ্রিল রকেটটির মাধ্যমে তিয়ানহে মডিউল পাঠায় বেইজিং, যাতে নভোচারীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচির সবশেষ অগ্রগতি এটি। চলতি বছরের মধ্যেই আরও অনেক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এ ধরনের কমপক্ষে ১০টি মডিউল কক্ষপথে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে বেইজিংয়ের।
বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা একমাত্র মহাকাশ স্টেশন আইএসএসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এতে অংশ নিতে দেয়া হয়নি চীনকে। ২০২৪ সালেই মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আইএসএসের। ধারণা করা হচ্ছে, এরপর পৃথিবীর কক্ষপথে একমাত্র মহাকাশ স্টেশনটি হবে চীনের। আকারে চীনেরটি আইএসএসের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এতে মহাকাশ গবেষণাগারের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে পূর্ব এশিয়ার দেশটির।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/ ১২২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ