পাহাড় ও সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই কম বলে তারা চাকরির সুযোগ থেকে ক্রমাগত বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে আদিবাসীদের মধ্যে বাড়ছে চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা। বুধবার সন্ধ্যায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম এ তথ্য জানান।
‘পার্বত্য ও সমতল আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকার গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছে এমজেএফ। গবেষণা কাজে আরও যুক্ত ছিলেন ড. দেবাশীষ কুমার কুণ্ডু ও মৃণ্ময় সমাদ্দার। গবেষণাটির লক্ষ্য ছিল বর্তমানে আদিবাসী সমাজের জীবিকা অর্জনসহ সামাজিক পরিস্থিতি, এর কারণ ও তাদের চ্যালেঞ্জগুলো অনুধাবন করা। গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে। উত্তরদাতার মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পুরুষ। তাদের পেশা মূলত কৃষি, পশুপালন আর দিনমজুরি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদিবাসীদের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা পাহাড়ের চেয়ে সমতলে বেশি। নওগাঁ ও রাজশাহীতে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ ও ৬৬ শতাংশ। এছাড়া ৩৯ শতাংশ বান্দরবানে, ৪০ শতাংশ রাঙামাটিতে এবং ৪১ শতাংশ খাগড়াছড়িতে। অন্যদিকে মধ্যম আয়ের পরিবারের সংখ্যা সমতলের চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশি। এছাড়া আদিবাসীদের আয়ের মূল উৎস কৃষি হওয়া সত্ত্বেও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে তাদের কৃষি উৎপাদনও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে, যা আদিবাসীদের দারিদ্র্য বাড়িয়ে তাদের করে তুলেছে ঋণনির্ভর। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী,
সমতলের চেয়ে পাহাড়ি আদিবাসীদের শিক্ষার হার কিছুটা বেশি। পাহাড়ে শিক্ষার হার ২১ ভাগ আর সমতলে ১৬ ভাগ। আবার পাহাড়ে যারা শিক্ষিত, তাদের মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ এসএসসি বা এইচএসসি পাস করার সুযোগ পেয়েছে। এর পরের স্তরে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। সমতল আদিবাসীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নওগাঁর প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার জন্য স্কুলেই ভর্তি হতে পারেন না।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য একেএম মাকসুদ কামাল, চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
সূত্র : সমকাল
আপনার মতামত জানানঃ