বিশেষ প্রতিবেদক : মহামারি করোনা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশবাসী মহা আতঙ্কে রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই। করোনা নিয়ে আতঙ্কের পাশাপাশি আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে। এরইমধ্যে দেশজুড়ে পুরনো মহামারি ডায়রিয়া নতুন করে আভির্ভূত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কোথাওবা হাসপাতালে দেখা দিয়েছে বেডের সংকট। এমতাবস্থায় মানুষ পড়েছে চতুর্মুখী বিপর্যয়ে।
পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ
পটুয়াখালীতে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে ডায়রিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় বাউফল ও পটুয়াখালী সদর উপজেলায় একজন করে মারা গেছেন। তবে, স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের সবাই নিজ নিজ বাড়িতেই মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাত হাজার ৩৪১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই হাজার ২২৩ জন, মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ৯৮১ জন, বাউফলে ৯২০ জন, সদরে ৭৮০ জন, দশমিনায় ৬৯১ জন, কলাপাড়ায় ৬৮৩ জন, গলাচিপায় ৬৬৩ জন ও দুমকীতে ৪০০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, সম্প্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে এবং এ পর্যন্ত সাত হাজার ৩৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুদ রয়েছে। এ পর্যন্ত বাউফল ও সদর উপজেলায় দু’জন মারা গেছেন।
পিরোজপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ
পিরোজপুরে ক্রমাগত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। এদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতে আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ভান্ডারিয়া উপজেলায় ৩০ জন, মঠবাড়িয়ায় ৩৪ জন, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) ২৪ জন, কাউখালীতে ১৮ জন, নাজিরপুরে ৭ জন এবং জেলা হাসপাতালে ১১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকেও প্রতিদিন প্রচুরসংখ্যক রোগী পরামর্শ ও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় হাসপাতালের সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী আসায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
ভান্ডারিয়া উপজেলা হাসপাতালে বারান্দায়ও রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে। কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড করায় এখন সাধারণ, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এক মাসে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-শিশু-পুরুষ মিলে ৩৫৪ জন রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি ক্লিনিকেও রোগীদের ভিড় বাড়ছে। রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. বেল্লাল হোসেন জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও পানি কম খাওয়ার কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। খাবার আগে হাত সাবান দিয়ে ধৌত করতে হবে।
এদিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার পাশাপাশি স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুসহ ২ শতাধিক নারী-পুরুষ ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে বেডের অভাবে অনেক রোগী মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে। হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রচন্ড গরম, দূষিত পানি পান করা এবং জন সচেতনতার অভাবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ২ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও হাসপাতাল ও বাজারে তীব্র স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। মঠবাড়িয়া পৌর শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ফার্মেসী গুলো স্যালাইন শূণ্য হয়ে পরেছে। মাঝে মাঝে ২/১টি পাওয়া গেলেও তা অগ্নি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। পৌর শহরের বাশার মেডিকেল হলের স্বত্তাধিকারী মোঃ আবুল বাশার জানান, ওষুধ কোম্পানি গুলো পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করতে না পারায় বাজারে স্যালাইনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি।
পিরোজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে কিছুটা আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।
ভোলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ
ভোলা জেলা সদর দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশনসহ পুরো জেলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। ভোলায় করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তাররা। ভোলায় গত এক মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।প্রচন্ড গরমে গত ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫২ জন রোগী। একসঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে একদিকে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। অন্যদিকে শয্যা সঙ্কটে ভর্তি হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের বারান্দার ও মেঝেতে।
ভোলার সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জেলার সাত উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫২ জন রোগী। এর মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৩২ জন, দৌলতখানে ১৬২ জন, বোরহানউদ্দিনে ৪৩০ জন, তজুমদ্দিন ১১৬ জন, লালমোহনে ১৭১ জন, চরফ্যাশনে ২৪৫ জন ও মনপুরায় ৯৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৩২৫ জন।
ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বেডে জায়গা দিতে পারছে না রোগীদের। অন্যদিকে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না অসহায় রোগীরা।
রোগীর স্বজনরা জানান, ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই সেবা না নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ৭৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করে যাচ্ছে।
বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ
বরগুনায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় দুই হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গবেষণায় দেখা গেলো জীবাণুযুক্ত পানির কারণেই এমনটা হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণেই ডায়রিয়া বেড়েছে। ইতোমধ্যেই একজন মারাও গেছেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যমতে, জানুয়ারির প্রথম দিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করে। শুধু বরগুনা সদর হাসপাতালে জানুয়ারিতে ১৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে রোগী ছিল ২০৩ জন। মার্চে হঠাৎ বেড়ে ৯০৩ জনে দাঁড়ায়। এপ্রিলেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এ মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৫৪০ জন ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
১৭ এপ্রিলেই ৩৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়াও জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন দুই শতাধিক।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) বেতাগী উপজেলার নুরুল ইসলাম (৭০) নামের এক ব্যক্তি বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসরা বলছেন, পানিবাহিত দূষণের ফলেই প্রকোপ বেড়েছে। এ ছাড়ার পরিচ্ছন্নতার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও এর জন্য দায়ী।
বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় বরগুনা জেলার অধিকাংশ মানুষ নদ-নদী ও পুকুরের পানি সরাসরি পান করে অভ্যস্ত। দৈনন্দিন কাজেও ওই পানি ব্যবহার করে। আক্রান্তদের অধিকাংশই বরগুনা জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম।
ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ
ঝালকাঠিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন নারী-শিশুসহ শত শত রোগী। এরই মধ্যে গত সাত দিনে ৭০৭ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। একইভাবে জেলার নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল থেকে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকালে ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানিক বেপারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
এ অবস্থায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকে সাধারণ ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের মেঝে ও করিডোরসহ হাসপাতালের সিঁড়িতে ঠাঁই নিতে বাধ্য হচ্ছে। তার উপর চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে রোগীদের সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।
এছাড়া হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন না থাকায় এবং উপজেলা পর্যায়ের দোকানগুলোতে স্যালাইনের সংকট থাকায় আক্রান্ত রোগীরা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মুনিবুর রহমান জুয়েল বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে আমরা যথাযথ চেষ্টা করছি। ইডিসিএল থেকে স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স স্বপ্নিল সমু জানান, প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়া রোগী আসছে তাতে ডাক্তার-নার্সসহ আয়াদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে এখানে।
শৈলকূপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ
প্রচণ্ড তাপদাহে ঝিনাইদহের শৈলকূপায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে শিশু ডায়রিয়ার রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ও রোগীর স্বজনদের চাপে বেড ও মেঝেতে তিলধারণের ঠাঁই নেই। নেই কোনো সামাজিক দূরত্বও। গরমে ডায়রিয়াবাহিত রোটা ভাইরাস বিস্তার লাভ করায় শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানান।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, শিশু, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের অধিকাংশ বেডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু। বেড না পেয়ে আবার মেঝেতে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকেই।
কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আতিকুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই ঘণ্টায় তিনি ১২ শিশু রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কয়েকশ শিশু জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. একেএম সুজায়েত হোসেন জানান, গরমে ডায়রিয়াবাহিত রোটা ভাইরাস বিস্তার লাভ করে। ফলে এ সময় শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। অত্যধিক গরমে শিশুদের ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
২০ ভাগ রোগীর করোনা উপসর্গ
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ১৫ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেকে বাড়িতেই স্যালাইন খায়, পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হাসপাতালে আসে। ভর্তি হওয়া রোগীদের অন্তত ২০ ভাগের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে। হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল আরো বলেন, যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অন্তত ৬০ ভাগ রোগী প্রবল ডায়রিয়া বা কলেরা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেলেও ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পরীক্ষার জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়ার রোগীদের আলাদা রাখা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) চিকিৎসক দীপংকর দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম সোমবার বরিশালে কাজ শুরু করেছে।
ডায়রিয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায়
ডায়রিয়াসহ এই গরমে আরো কিছু সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন রোগতত্ত বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমান। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে মানুষ হিট এক্সরসন বা হিট ক্র্যাম্পে আক্রান্ত হতে পারে। হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সরসন থেকে রোগীর হিট স্ট্রোকও হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, মাথা ঘোরে। পরিস্থিতি খারাপ হলে রোগীর বমি হতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে। সাধারণত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ, যারা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করেন, তারা এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে গরম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মিজানর রহমান। তিনি জানান, হিট স্ট্রোক হয়ে গেলে রোগীর গা মুছে দিতে হবে।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। বৈশাখেও বৃষ্টির দেখা নেই। তাই গরমও বেড়েছে। গরমে রাস্তার পাশের শরবত পান, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকা, অনিরাপদ পানি পান ও খাবার খাওয়ার কারণে গরমের এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাইরের যেকোনো খাবার বর্জন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ