যুব ও ছাত্রলীগ সমাজের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। যুব ও ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্র হত্যার মহাউৎসবে মেতে উঠেছে এই সংগঠন দুটি। কে বিরোধী আর কে নিজ দলের বাছাই করার সময় এই দলের ক্যাডারদের হাতে নেই। সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা, অপরকে পিটিয়ে ছাতু বানানোই এদের কাজ। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করা এখন তাদের কাছে ডাল-ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক নির্যাতনেও বেশ এগিয়ে। এদের অপকর্মের তালিকা করতে বসলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে। এবার শোনা গেলো এমপি-মেয়রের বিরুদ্ধে সংবাদ করায় পত্রিকা অফিসে যুব ও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাণ্ডব চালিয়েছে।
জাতীয় এক দৈনিক থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক আমার হবিগঞ্জ অফিসে এ হামলা হয়েছে। এ সময় পত্রিকাটির সম্পাদক-প্রকাশকের শ্বশুরবাড়িসহ ৭-৮টি ফ্ল্যাটেও তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীদের ঠেকাতে পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলে সদর থানার ওসি (তদন্ত)-সহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।
পত্রিকাটির সম্পাদক-প্রকাশক সুশান্ত দাস গুপ্ত দৈনিক যুগান্তরকে জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহির ও নবনির্বাচিত মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের নানা অপকর্মের খবর প্রকাশের জেরেই সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের সামনেই এই হামলা করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।
যদিও আতাউর রহমান সেলিম জানান, তিনি হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, এ হামলায় জড়িত ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এই পত্রিকায় অসত্য খবর প্রকাশ করার ক্ষোভ থেকেই হয়তো তারা এই হামলা চালিয়েছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, দৈনিক আমার হবিগঞ্জে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই খবর ছাপা হচ্ছে, এর ক্ষোভ থেকেই এ হামলা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের সামনেই এমন হামলা হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সামনের দিকে ছিল। হামলাকারীরা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে অপর একটি ভবনের ছাদ দিয়ে সেই ভবনে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ আহত হওয়ায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে একইদিনে গাজীপুরে যুবলীগ নেতা কাইয়ুম সরকারের দখল থেকে কোটি টাকা মূল্যের এক একর বনভূমি উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। ওই বনভূমিতে মাছের খামার গড়ে তুলে ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সকালে ভেকু দিয়ে মাছের খামার মাটি ভরাট করে বন বিভাগ। ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজল তালুকদার উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব।
এদিকে আজ মঙ্গলবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় চাঁদা না পেয়ে জেলেদের মাছ ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ছিনতাইয়ে বাধা দিতে এলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া ইউপি মেম্বার মতিয়ার রহমানকে (৪৮) মারধর করেন। গুরতর আহত ওই ইউপি সদস্য বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে ভুক্তভোগী জেলে রহমত আলী বাদী হয়ে জিয়াকে প্রধান আসামি করে দুজনের নাম উল্লেখ করে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। গতকাল রাতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের এবং মামলা রুজুর আবেদন করেন ওই তরুণী।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যে হঠাৎ করে হচ্ছে তা নয়। পর্যায়ক্রমে নিচে যেতে যেতে একটা গভীর সংকটে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। আদর্শহীনতা, নীতিহীনতা—এগুলো দ্বারা রাজনীতি দূষিত হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতি যদি দূষণমুক্ত হতো তাহলে সরকারের নীতি ভিন্ন হতো।
তারা মনে করেন, দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। যুব ও ছাত্রলীগ নেতাদের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলীয় প্রভাব খাটিয়েই যুব ও ছাত্রলীগ নেতারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমনকি প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ পেশার অনেকেই। আইনের দীর্ঘসূত্রিতা, জটিল বিচারিক প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা থামানো যাচ্ছেনা। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় এই পেশা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, “সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হলেও সেগুলো আদালতে নিতে চান না। কেননা মামলা করতে গেলে প্রতিষ্ঠান থেকে যে সাপোর্ট লাগে বা অর্থনৈতিকভাবে যে সাপোর্ট লাগে, সেটা তাদের সবার থাকেনা। এ অবস্থায় বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রীয় সামাজিকভাবে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩০৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ