এবার বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই বিজেপি সরকার গঠন করবে বলে দাবি মুম্বাইয়ের সাট্টা বুকিদের। শুধু মুম্বাইয়ের বুকিরাই নন, দেশের মধ্যে সবচেয় সঠিক ভবিষদ্বানী করা রাজস্থানের পালোধি সাট্টা বাজারের বুকিরাও পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনে গেরুয়া শিবিরের পক্ষেই বাজি ধরেছেন।
পশ্চিবঙ্গের ভোট শুরু হবার আগে সিএনএক্স, ইন্ডিয়া নিউজ-জন কি বাত, প্রিয়বন্ধু, শাইনিং ইন্ডিয়া এবং ক্রাউড উইজডম ৩০৬ ডটকমের সমীক্ষাগুলোর গড় করে বিজেপি সরকার গঠন করছে বলে দাবি করেছিল।
এই ৫টি সমীক্ষার গড় হিসাব তুলে ধরে ক্রাউড উইজডম ৩০৬ ডটকম দাবি করেছে, বিজেপি ১৪০, তৃণমূল ১৩০ এবং বাম-কংগ্রেস জোট ২১ টি বিধানসভা আসন পেতে পারে। এছাড়া দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিক্যাল স্ট্যাডিজের গবেষক ড. সজ্জন কুমারের নেতৃত্বে একদল গবেষক একটি সমীক্ষায় পরিচালনা করেন।
‘মুড ইজ ফর পরিবর্তন’ শিরোনামে ৫০ পৃষ্ঠার ওই সমীক্ষাটি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, বাংলার ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ১৬০ টি আসনে জয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়তে যাচ্ছে। আর তৃণমূল ৭০ এবং বাম-কংগ্রেস জোট ১২ টি আসন পেতে চলেছে।
কিন্তু অপর কয়েকটি সংস্থার বিচারে তৃণমূলের সরকার গড়ার সম্ভবনাকেই তুলে ধরা হয়েছিল। আবার কয়েকটি সংস্থার মধ্যে সরকার গঠনে বাংলায় কোনও দলই ম্যাজিক ফিগার পাচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে মুম্বাইয়ের সাট্টা বুকিদের দাবি, বিজেপি ১৯১ থেকে ১৯৯ বিধানসভা আসন পেতে চলেছে। তৃণমূল পাচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৩ টি। বাম-কংগ্রেস সংযুক্ত মোর্চা পাচ্ছে মাত্র ১৩ থেকে ২০টি বিধানসভা আসন।
ভারতজুড়ে চলা মুম্বাই বুকিদের হিসাবে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দর দেওয়া হয় যে দলের সরকার গঠনের সম্ভবনা অনেক কম। আর দরের হার কমার মানে জয়ের সম্ভবনা বেশি থাকা। তাদের দর অনুসারে বাম-কংগ্রেস সংযুক্ত মোর্চাকে জিতলে পাওয়া যাবে ২৯ পয়সা। এরপরেই রয়েছে তৃণমূল। তাদের ক্ষেত্রে দর দেওয়া হয়েছে ১৩ পয়সা। আর সবচেয়ে কম দর দেওয়া হয়েছে বিজেপি ক্ষেত্রে- মাত্র ৮ পয়সা।
হারলেও জিতে যাবে বিজেপি
যদি বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে না পারেন, তাহলেও বিজেপি তার মতাদর্শগত লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই অনেকখানি সফল। মুসলিম তুষ্টিকরণের অভিযোগ তুলে ভোটের মেরুকরণ, নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়ে মতুয়াদের পরিচিতিসত্তাকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির একেবারে মূলস্রোতে এনে ফেলেছে। উগ্র হিন্দুত্ব ও উগ্র জাতীয়তাবাদ এরই পরের ধাপ। অনলাইনে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বারবার অনুপ্রবেশ, গরু পাচারের বিষয়ে ধর্মের রং লাগাতে সফল।
চায়ের দোকান থেকে টিভির পর্দা— কোনও রাজনৈতিক বিতর্কই এখন আর এই হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। ভোটের মাঝেই সম্প্রতি শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহতদের ধর্ম পরিচয়টাই সেখানে তাই আসল হয়ে উঠেছে। তাই বিজেপি নেতারা দাপটের সঙ্গে শীতলখুচিতে চার জনের বদলে আট জনকে মেরে ফেলা দরকার ছিল বলতেও পিছপা হননি।
বিজেপি কি অপ্রতিরোধ্য?
২০১৪-র পরে ২০১৯-এ বিজেপির ‘প্রচণ্ড বহুমত’-এ জয়, দেশের ১৩টি রাজ্যে বিজেপি বা তার জোটের সরকার চললেও মনে রাখা দরকার, ২০১৮-র পরে গত ১৮টি বিধানসভা ভোটে বিজেপি মাত্র দু’টি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছে।
ত্রিপুরা ও অরুণাচল প্রদেশ। হরিয়ানা, বিহারে বিজেপি শরিকদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু কান ঘেঁষে। রাজস্থান, ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতা হারিয়েছে। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, এমনকি বাংলার পাশের রাজ্য ওড়িশায় বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। ওড়িশায় মুসলিমরা জনসংখ্যার মাত্র ২.২ শতাংশ। হয়তো সে কারণেই ‘জয় জগন্নাথ’-এর রাজ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে মেরুকরণ করা কঠিন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ