কয়েদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আজ শনিবার(১৭ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
আজ শনিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদকে। জালাল উদ্দিন খেলাফতে মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব এবং সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সহসাধারণ সম্পাদক।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাম্প্রতিক নাশকতা এবং হেফাজতের পুরোনো মামলায় জালাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে আজ শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনিয়ে হেফাজতের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে বারিধারা এলাকার একটি মাদ্রাসা অভিযান চালিয়ে জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তিনি জমিয়ত-ই-উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি ও ঢাকার জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে গ্রেপ্তার করার জন্য ভাটারা এলাকায় কয়েকশ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আধা ঘণ্টা পর সাড়ে ৪টার দিকে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব দাবি করেন, অন্যায়ভাবে আলেমদের গ্রেপ্তার করে পবিত্র রমজানের রহমত ও শান্তির মাসকে অশান্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ২০১০ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের হামলা, ভাংচুর, বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড চালায়নি। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ইতিহাসে দেশব্যাপী সর্ববৃহৎ প্রোগ্রাম করেছে।
জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শহীদ করা হয়। এত কিছুর পরও হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির একদিন পরই আজ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গতকাল নাশকতার অপরাধে দায়ের করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
জুবায়েরের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলা ছাড়াও নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
জানা যায়, হেফাজতের নেতা জুবায়েরের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলা ছাড়াও নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এদিকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আগের মামলাগুলোর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া নতুন করে তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস, ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও শনিবার (১৭ এপ্রিল) মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, সব দিক থেকে চাপে ফেলে সংগঠনটির নেতৃত্বে আগের মতো একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ জন্য রমজান মাস ও করোনার কারণে চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হচ্ছে।
তারা বলেন, হেফাজত যেকোনো পরিস্থিতিতে মূলত মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে থাকে। কওমি মাদ্রাসাগুলো এখন রমজানের ছুটিতে রয়েছে। তাই এ সময়টাকে হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া হেফাজতের নেতৃত্বের আইনি ব্যবস্থা জোরদার করার ক্ষেত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বিতর্ক সরকারের জন্য সহায়ক হয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা হেফাজত নেতাদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় অন্য নেতাদেরও ‘দুর্বল’ দিক খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিক কেলেঙ্কারি, মাদ্রাসা পরিচালনায় অনিয়ম, মাদ্রাসার তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম থাকলে সে বিষয়গুলোও সামনে আনা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজত নিকট অতীতে আওয়ামী লীগের মিত্র শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সরকারের সখ্য সবার জানা। শফীর জীবদ্দশায়ও মাঝে মধ্যে এই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আবার উন্নতিও হয়েছে। শফীর মৃত্যুর পর সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশ প্রতিভাত হয়েছে। রাজনীতির মাঠে হেফাজত নানা সময়ে নানাজনের কাছে ব্যবহার হয়েছে। বিগড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘একটু এদিক-সেদিক’ করতে হয়। এখন সেই পরিস্থিতিতেই পড়েছে তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ