করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবল থেকে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রফতানি বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স আহরণে। সরকার করোনা বড় শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ালেও দরিদ্র-শ্রমজীবী-নিম্নবিত্ত পরিবারের পাশে সেভাবে কার্যকরভাবে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ৯ সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন অভিযোগ করেন ৯ সংগঠনের নেতারা।
৯ সংগঠনের সমন্বয়ক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় গণফ্রন্ট সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাসদের (মাহবুব) কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন ও কমিউনিস্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইমাম গাজ্জালি।
বৈঠকে বলা হয়, করোনা অতিমারিতে জনগণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জনগণকে সম্পৃক্ত করে করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে ও চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। একইসাথে লকডাউনে কর্মহীন শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবার প্রতি নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা করার দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে।
নেতারা বলেন, সরকার করোনা অতিমারিতে বড় শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা সহায়তা দিয়ে পাশে দাড়ালেও দরিদ্র শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত পরিবারের পাশে সেভাবে কার্যকরভাবে দাঁড়ায়নি। চলতি বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যথাযথ অর্থ বরাদ্দ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।
বৈঠকে সারা দেশে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, কভিড-১৯ রোগী চিকিৎসায় অবিলম্বে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ, অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণ, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগ ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আমদানির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এছাড়া সারাদেশে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবার প্রতি নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান; সারা দেশে পূর্ণ রেশনিং চালু করা; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ; জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ড চালু ও তা পরিচালনায় ডাক্তার-নার্সদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া; পাটকল আন্দোলন নেতা রুহুল আমিনসহ রাজনৈতিক কারণে আটকদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া, সব ধরনের রাজনৈতিক দমন-গ্রেফতার-নির্যাতন বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়।
এদিকে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে অর্থনীতি সচল রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। মানুষের জীবন বাঁচাতে করোনা সংক্রমণরোধে এখন সারাদেশ লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে এ সময়টাতে প্রতিবছর অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হয়। চাঙ্গা হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে ঈদ বাণিজ্যে ধস নেমে আসে। দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ার কারণে এবারও বেচাকেনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দারিদ্র্য খাত সুরক্ষাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ১৩ দফা সুপারিশ এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। পাশাপাশি দ্রুত প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আস্থাহীনতাসহ পাঁচটি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু ও বিলম্বে বাস্তবায়নের কারণ শনাক্ত, রফতানি খাতে নজর ও শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করা। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে তিন দিনের সিরিজ বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে- প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি স্বাধীন (তৃতীয় পক্ষ দিয়ে) মূল্যায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে (এসএমই) আরও সহায়তা দেয়া, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্যাকেজের সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। এছাড়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণের অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত, এসএমই খাতে প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এসএমই খাতে নিয়ে আসা।
একই সঙ্গে নতুন গরিব হওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে দেশব্যাপী ওএমএস কর্মসূচী চালু. কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতে ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা ও প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। সেখানে আরও বলা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দ্রুত ছাড় করতে হবে।
প্যাকেজ সংক্রান্ত ওই বৈঠকের বিষয়ে অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সুপারিশের ভিত্তিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনায় দু’ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম স্বাস্থ্য খাতের ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি। স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি প্রতিদিন প্রকাশ করা হচ্ছে।
তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব বের করতে আরও সময় লাগবে। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর ৪ শতাংশ ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা নিয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে, ২৯ শতাংশ হতে পারেনি। এজন্য প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে এটি কার্যকর হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ