শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ১০ হাজার ১৮২ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। আর প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি ভাইরাসটি ধরা পড়েছে ৪ হাজার ৪১৭ জনের শরীরে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭৯ জন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) ৯৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার আগে লকডাউনের প্রথম দিন ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা এ যাবতকালে দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল ও বাড়িতে নতুন করে ৫ হাজার ৬৯৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লাখ ২ হাজার ৯০৮ জন।
সূত্র মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৭০৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৯০৬টি। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮টি।
গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র।
মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে।গত বছরে এত মৃত্যুর সংখ্যা দেখেনি দেশ। তবে এ বছরই আক্রান্ত ও মৃত্যু রেকর্ড হারে বাড়তে থাকে।
ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
বেশ কিছুদিন ধরেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে আসছেন। পাশাপাশি সব ধরনের সভা-সমাবেশ, জনসমাগম, জমায়েত নিষিদ্ধ, দোকানপাট ও মার্কেট খোলা রাখার সময় ৬ ঘণ্টা নির্ধারণ করে দেওয়া, রাত্রিকালীন কারফিউ দেওয়াসহ কঠোর পদক্ষেপে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গত ৫/৬ দিন ধরে করোনা সংক্রমণ খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে সেই সঙ্গে মুত্যুও বাড়তেই থাকবে। আমরা মহাসংকটের মধ্যে আছি। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা যাচ্ছে না। এক মাসে সংক্রমণ কম ছিলো, সংক্রমণ ৫ ভাগের নিচে নেমে এসেছিল।
এখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বিয়ের অনুষ্ঠান, পর্যটন সর্বত্র জনসমাগম ও উদাসিনতা লক্ষ্য করা গেছে। হাত ধুচ্ছে না, মাস্ক পরছে না, দূরুত্ব বজায় রাখছে না। প্রসাশন এবং সরকারও মনে করেছিল নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, একটা ঢিলেঢালা ভাব ছিল। এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে পরিস্থিতির লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাবে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেল্থ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সেটা দেরি হয়ে গেছে, আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। যদি এখনই সংক্রমণের গতি থামানো না যায় তাহলে একটা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হবে। হাসপাতালে রোগী ধারণের ক্ষমতা না থাকলে বাইরে ব্যবস্থা করে সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এগুলো নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিতি একটা মহাবিপর্যয়ের দিকে চলে যাবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে ও পরিস্তিতির অবনতি হচ্ছে। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এটাকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সংক্রমণের বিস্ফোরণের মধ্যে আছি। এটাকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। কারণ লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়ছে, সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যু বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আরও বাড়বে এবং ইউরোপের মতো বিস্ফোরণ ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০৩৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ