নির্ধারিত সময়ের দু-দিন আগে ১২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। ১৪ তারিখ থেকে দেশজুড়ে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার (১০ এপ্রিল) সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে উদ্ধৃত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলার কথা ছিল।
মহামারীর মধ্যেই গত ১৮ই মার্চ এবারের অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করা হয়। পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলার কথা ছিল।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে গত ৫ই এপ্রিল দেশব্যাপী ঘোষিত চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রাক্কালে এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছিল, লকডাউনের মধ্যেও প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর কার্যক্রম চলবে। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জারি করা বিধিবিধান ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবারের বইমেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় সব মিলিয়ে ৫২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া মেলায় রয়েছে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন।
এদিকে করোনাকালের বইমেলা হিসেবে গতকালের মেলা ভালোই জমে উঠেছিল। স্টলে ক্রেতার আনাগোনা, বইয়ের ব্যাগ হাতে পাঠকের ঘোরাফেরা, স্বাধীনতা চত্বরকে ঘিরে সেলফি তোলা—সবকিছুই ছুটির দিনের মেলাকে জমে উঠবার চেহারা দিয়েছিলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দুপুর গড়াতেই মেলায় পাঠকের আনাগোনা বেড়ে চলে। জমে ওঠে বইমেলা। মেলার শেষ সপ্তাহে যা হয় মানুষ লিস্ট করে বই কেনে। তেমন আগ্রহী পাঠকদেরও দেখা গেল বই কিনতে। এছাড়া, জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের ক্রেতারাও ভিড় করেছিলেন স্টলে স্টলে।
তবে শেষ শুক্রবার হিসেবে যেভাবে মেলা জমে উঠবার প্রত্যাশা প্রকাশকরা করেছিলেন সেটা হয়নি। এখন মেলার শেষ দিন পর্যন্ত কি হয় এমন প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন কেউ কেউ। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, শেষ শুক্রবারের মেলা নিয়ে যে প্রত্যাশা করেছিলাম সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শুক্রবারে বেশি ভিড় থাকে বলে আরেক দিন নিরিবিলি পরিবেশে এসে বই কিনবেন এমন চিন্তা থেকেও অনেকে হয়তো মেলায় আসেননি। এখন শেষবেলায় যদি বিক্রি বাড়ে—এমন আশা করা ছাড়া আর উপায় কী। শেষ দিন পর্যন্ত কি হয় দেখতে চাই।
বাতিঘর এর স্বত্বাধিকার দীপঙ্কর দাশ বলেন, আমাদের স্টলে প্রতিদিন কিছু বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি বই আছে, যেগুলো বেশ চাহিদা রয়েছে। মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করলে, ক্রেতা আসবেই বলে বিশ্বাস করি। এবার অনেকে মেলায় আসতে পারেননি করোনার জন্য। তারা ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে কিন্তু বই কিনছেন। ফলে বই বিক্রি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
মেলায় কথা প্রকাশ এনেছে মোহাম্মদ বারীর নাট্যগ্রন্থ ‘তিন গল্পের নাট্যায়ন’। স্টলে ছিলেন এই লেখক। তিনি বলেন, “এবারের মেলা সব দিক থেকেই প্রতিকূল অবস্থায় হয়েছে। তারপরও মেলার পরিবেশ ভীষণ ভালো। বড় পরিসরে মেলা হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি সহজ হয়েছে।
প্রতিবছর ছুটির দিনে শিশু চত্বরে মানুষের ভিড় থাকে বেশি। মা-বাবাদের সঙ্গে শিশুরা মেলায় আসে বই কিনতে। এবারের মেলায় শিশুদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ছে। শিশু চত্বরও একবারেই ফাঁকা। শিশুদের বই যারা প্রকাশ করেন তাদের বিক্রি এবার একেবারেই নেই। ময়ূরপঙ্খি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন, বইমেলায় পাঠকরা এলেও শিশু চত্বরে কারো পা পড়ে না। শিশুদের বই বিক্রি এবার খুব খারাপ।
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন দেওয়াসহ নানা কারণেই এবারের বইমেলায় পাঠকের সেই ঢল নেই।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের স্মরণে প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার বিলম্ব হয়েছে। সে হিসেবে ১৮ মার্চ শুরু হওয়া মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল তথা পয়লা বৈশাখে। কিন্তু নতুন ঘোষণা অনুযায়ী দুইদিন আগে ১২ এপ্রিল মেলার পর্দা নামছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ