মরণব্যাধী এইডস প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরেই মরণব্যাধি এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তারা। অবশেষে সেই প্রচেষ্টায় বড় ধরনের সাফল্য পেলেন তারা।প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লিনিকাল পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছে আন্তর্জাতিক এইডস ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (আইএভিআই) এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট আবিষ্কৃত নতুন এইচআইভি ভ্যাকসিন। গতকাল বুধবার (৭ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্যাকসিনটি শরীরকে “ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবডি” তৈরি করতে সহায়তা করে।
গবেষকরা আশা করছেন, এইচআইভি ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন ও পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এই ভ্যাকসিন।
এ বিষয়ে ন্যাশভিলের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধমূলক ওষুধ এবং সংক্রামক রোগের অধ্যাপক ডা. উইলিয়াম শ্যাফনার বলেন, “আপাতত এগুলো খুব প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা। তবে তা সত্ত্বেও প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এইচআইভি ভাইরাসের ধরন খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। ভাইরাসটির বিভিন্ন উপ-প্রকারও রয়েছে। তাই এক প্রকারের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন অন্যটির বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে।
শ্যাফনার বলেন, “এসবক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভাইরাসটি খুবই তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে।”
গবেষণায় ৪৮ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরের দু’মাস পরপর এই ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই ব্যক্তিদের ৯৭ শতাংশের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ অ্যান্টিবডিগুলো তৈরি করতে সক্ষম হবে।
আইএভিআইয়ের প্রধান নির্বাহী ডা. মার্ক ফেইনবার্গ জানান, “এই গবেষণাটি এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তিদের একটি উপ-সেট শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। সংক্রমণ চলাকালীন যাদের দেহে অ্যান্টিবডিগুলো কার্যকরী হয়ে উঠেছে। মূলত এই অ্যান্টিবডিগুলো বিভিন্ন ধরনের এইচআইভি’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে সক্ষম আর এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
এর আগেও মরণব্যাধী এইডসের ওষুধ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এইডসের মতো প্রায় হুবহু মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত বেশ কয়েকটি বানরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছিলেন তারা।
জানা যায়, অতি প্রাচীন ম্যাকাকু প্রজাতির বানরের দৈহিক গঠনের সাথে মানব দেহের বেশ মিল রয়েছে। সে কারণে আক্রান্ত এসব বানরের দেহে মারাত্মক এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম নতুন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা হয়।
এতে এসআইভি (সিমিয়ান ইম্যুনোডিফেসিয়েন্সি ভাইরাস) ভার্সনের এ ওষুধগুলো বারবার উচ্চমাত্রায় ব্যবহার করা হয়।এর আগে ২০১৩ সালেও বানরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এইচআইভি ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
তবে তারা ওই প্রচেষ্টাকে খুবই কার্যকর বলে অভিহিত করেছিলেন।যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্ক্রিপস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ও এ গবেষণা প্রধান মিশেল ফারজান বলেন, ‘এইচআইভি-১ মানব দেহে বিস্তারিত ভাইরাসের প্রধান গ্রুপ।
আমরা এই এইচআইভি ১-কে প্রতিরোধ করার মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ভ্যাকসিন অর্জনের পন্থা দেখাই।’গবেষণায় এর মূল ওষুধকে ইসিডিফোর-এলজি বলা হয়। এতে একটি কোষের আস্তরে থাকা প্রোটিনের (যেটি নির্দিষ্ট মলিকিউলগুলোকে এই আস্তরে বেঁধে রাখে।
যাতে এসব বিশেষ ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ফলে কোষের ভেতরে শোষণ করা যেতে পারে।) দুধরনের অনুকৃত উপাদান রয়েছে। একইসাথে প্রোটিনের ঢোকা ও বের হওয়ার কিছু পয়েন্টও রয়েছে।
যেখানে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর মূল দূর্গ সিডিফোর কোষগুলোও রয়েছে। এই দূর্গের মুখে এসে এইচআইভি ভাইরাসগুলো ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
গবেষণায় এই ইসিডিফোর-এলজির অনুকরণেই এইডসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালানো হয়। মূলত প্রোটিনের ঢোকা ও বের হওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা পাকাপাকিভাবে শুরু হওয়ার আগেই তাতে বিশেষ ধরনের প্রতিরোধকারী কৌশল হিসেবে কাজ করে এই ভ্যাকসিন। যাতে কোনোভাবেই ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে।
মোটকথা এই ভ্যাকসিনে এমন সব উপাদান রয়েছে যা কার্যকরভাবেই ভাইরাস প্রবেশ করার দরোজাই বন্ধ করে দেয়। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাকে খুবই কার্যকর অর্জন হিসেবে দেখছিলেন। কিন্তু আশার আলো দেখেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকাতেও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইএআইডি)। স্বাধীন তথ্য এবং সুরক্ষা নিরীক্ষণ বোর্ড এইচআইভি প্রতিরোধে ভ্যাকসিনটি অকার্যকরের প্রমাণ পাওয়ায় এর ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংস্থাটির পরিচালক ড. অ্যান্হনি ফসি এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী এইচআইভি নির্মূলে একটি ভ্যাকসিন খুবই দরকার। আমরা আশা করেছিলাম, এটি কাজ করবে। দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। নিরাপদ ও কার্যকর এইচআইভি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের অন্য গবেষণা চলবে। আমি বিশ্বাস করি, এটা অর্জন সম্ভব।
তবে এইডসের এবারের নতুন ভ্যাকসিন আশার আলো দেখাবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ