সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রাদায়িক আগুন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আতঙ্কে থাকারই কথা। দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ক্রমাগত অসহযোগিতা তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এবার শোনা গেল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে হুমকি দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ছয় হিন্দু পরিবারের বসতঘর। শনিবার (২৭ মার্চ) গভীর রাতে উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী মনুভূঁঞাপাড়ায় মৃত অর্জুন শীলের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাড়ির মৃত অর্জুন শীল, সহদেব শীল, জয়দেব শীল, বাসুদেব শীল, শেফালী শীল ও নীলিমা শীলের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অর্জুন শীলের স্ত্রী স্বপ্না শীল জানান, দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে স্থানীয় ছেরাজুল ইসলাম গংয়ের মামলা চলছে। মামলা তুলে নিতে এবং জমি দখল নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে বহিরাগতরা রাতে তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দেয়। সপ্তাহ খানেক আগেও রাতের বেলা একদল লোক এসে তাদের বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। এসব বিষয় জানানো হলে মিরসরাই থানা পুলিশ এসে তদন্ত করে। স্বপ্না জানান, শনিবার রাতে তাদের ঘরের চালে কে বা কারা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির সব ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত বলে তিনি ধারণা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তিনি।
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুপুর ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘এখানকার ৪টি ঘরে বিদ্যুত লাইন ছিল না। আর সবকটি ঘরে একযোগে আগুন লাগে। এটি কোন সাধারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনা নয়। তবে কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও ঘটনাটি ঘটায়নি। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
থানার ওসি মুজিবুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ এখনও থানায় অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ নিজ উদ্যোগে ঘটনার তদন্ত করছে। দোষীদের চিহ্নিত করে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। তারা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক কিছু ব্যক্তি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে। এ ব্যাপারের প্রশাসনসহ সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
তারা জানান, দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আতঙ্কে থাকারই কথা। দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ক্রমাগত অসহযোগিতা তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এলাকার প্রত্যেক পরিবারকে নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিতসহ কারা এই আক্রমণ চালিয়েছে এব্যাপারেও তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে প্রশাসন ও সরকার এবিষয়ে কতটা সহযোগিতাপরায়ণ হবে এবিষয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না বলে তাদের অভিযোগ৷
তারা বলেন, ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরের দলগুলো ইসলামপন্থীদের, বিশেষ করে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারণে সমাজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তাদের শক্তির চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে। রাজনীতির আলোচনার সূচি অংশত তারাই নির্ধারণ করছে। আশু এ অবস্থার অবসানের সম্ভাবনা নেই; উপরন্তু তা আরও বিস্তৃত হবে বলেই অনুমান করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ