যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে টিকা রপ্তানিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে সতর্ক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ভ্যাকসিন বিষয়ে ইইউর ২৭ দেশের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলন শেষে ইইউপ্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, আমি মনে করি ইউরোপীয় সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তার প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। চুক্তি অনুযায়ী ইইউভুক্ত দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ না করা পর্যন্ত রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় টিকার অনুমোদন ও টিকা কেনার ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে জর্জরিত ইউরোপীয় কমিশন৷ সদস্য দেশগুলি টিকা কেনা ও বণ্টনের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব কমিশনের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় সেই চাপ আরো বেড়ে চলেছে৷ যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে না পাওয়ায় টিকাকরণ কর্মসূচি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে৷ এদিকে করোনা সংক্রমণের ‘তৃতীয় ঢেউ’ ইউরোপে সংকটের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷
যুক্তরাজ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) টিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সতর্ক করে বলেছেন, রপ্তানিতে এ ধরনের অবরোধ আরোপ যুক্তিসম্মত নয়। তিনি বলেন, রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্যের টিকাদান কর্মসূচিকে সংকটজনক অবস্থায় ফেলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাজ্যে টিকাদান কর্মসূচিতে এগিয়ে। বরিস জনসন আরও বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বায়োএনটেক–ফাইজারের টিকা রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এর জবাবে ইইউপ্রধান ভন দ্যর লিয়েন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি টিকা রপ্তানি করেছে। এর আগে তিনি টুইটে বলেন, ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত ৩৩টি দেশে ইইউ ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু ওষুধ কোম্পানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাঁদের চুক্তির বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল নয়।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট বলেছেন, টিকা রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ খুবই গ্রহণযোগ্য।
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেবল সদস্যদেশেই টিকা সরবরাহ করে না, সারা বিশ্বে টিকা রপ্তানি করে।
টিকা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে ইইউ সামগ্রিকভাবে দোটানায় রয়েছে৷ অনেক নেতা আশা করছেন, যে, হুমকির ফলেই কাজ হবে, বাস্তবে এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত কার্যকর করতে হবে না৷ তা না হলে পালটা নিষেধাজ্ঞা শিল্পজগতের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে৷ তবে অ্যাস্ট্রাজেনিকা কোম্পানি যেভাবে ব্রিটেনের প্রতি ‘পক্ষপাত’ দেখিয়ে একতরফাভাবে সে দেশে টিকা রপ্তানি করে চলেছে, সেই পথ বন্ধ করার বিষয়ে ঐক্যমত দেখিয়েছেন ইইউ নেতারা৷ ব্রিটেন ইইউ-তে উৎপাদিত দুই কোটি দশ লাখ টিকা পেলেও সে দেশ থেকে একটি টিকাও ইউরোপে না আসার কারণে সেই ক্ষোভ আরো বেড়ে গেছে৷ বুধবার দুই পক্ষই সব নাগরিকের কল্যাণে বিরোধ মেটানোর অঙ্গীকার করেছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, এবার ভালোমানুষির দিন শেষ৷
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে করোনা টিকার ব্যাপক ঘাটতির পর আগামী তিন মাসে সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে বলে আশা করছে ইইউ৷ বায়োনটেক-ফাইজার কোম্পানি ২০ কোটি, মডার্না কোম্পানি সাড়ে তিন কোটি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন সাড়ে পাঁচ কোটি টিকা সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে৷ ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল বলেন, এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ টিকা সরবরাহ বাড়ানো এবং ইইউ সদস্য দেশগুলিতে টিকার ন্যায্য বণ্টন চালিয়ে যাওয়া হবে৷
এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা রফতানি ‘সাময়িক’ বন্ধ করেছে ভারত। বুধবার (২৫ মার্চ) রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। এর ফলে টিকার রপ্তানি আগামী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। কোভ্যাক্সের আওতায় যে ১৮০টি দেশ টিকা পাওয়ার কথা, তাদের ক্ষেত্রে ভারতের এ সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলবে।
টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বে কোভ্যাক্স নামের এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এ পর্যন্ত ৭৬টি দেশে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডোজ পেয়েছে কোভ্যাক্স। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে কোনো টিকার চালান বিদেশে পাঠানো হয়নি।
কোভ্যাক্সের টিকা ক্রয় ও বিতরণে যুক্ত থাকা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তরে এক ইমেইলে জানিয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য যে টিকার চালান সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাঠানোর কথা ছিল, তার রপ্তানির অনুমোদন না মেলায় সরবরাহ বিলম্বিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।“যত দ্রুত সম্ভব টিকার সরবরাহ যাতে পাওয়া যায়, সেজন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে কোভ্যাক্স,” বলেছে ইউনিসেফ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ