সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রাদায়িক আগুন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাতে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণির একদিকে যেমন আন্দোলন মিছিল হচ্ছিল অন্যদিকে দেশে বিষের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতন। সুনামগঞ্জের শাল্লারে সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করার পরই মাগুরায় বেনামে চিঠি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানানো সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। এবার শোনা গেল রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খাগজানা গ্রামে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার(২০ মার্চ) রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দুর্বৃত্তদের এই হামলায় রাম সাহা, সুদেব কর্মকার ও সেন্টু কর্মকার নামে তিনজন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় সুদেব কর্মকার বাদী হয়ে কালুখালী থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ জিল্লুল ও বারেক নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কর্মকার জানান, খাগজানায় তার গ্রামের বাড়ি। সেখানে কর্মকার বাড়ি দুর্গামন্দিরে রাত ১১টার দিকে হইহই রব করে ৫০ থেকে ৬০ জন দুর্বৃত্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এলাকাবাসী একজোট হয়ে তাদের বাধা দিতে যায়। ওই সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় সুদেব কর্মকার, রাম সাহা ও সেন্টু কর্মকার আহত হয়। এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি বাড়ির বেড়া ভাঙচুর করে তারা।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। এর জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। শাল্লায় যাদের অনুসারীরা হামলা করেছে, এখানেও তারাই এ হামলার চেষ্টা করেছে।
কালুখালী থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। শাল্লারের ঘটনার রেশ এখনো যায়নি, এরই মধ্যে কালুখালিতে আক্রমণ। তারা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক কিছু ব্যক্তি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে। এ ব্যাপারের প্রশাসনসহ সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
তারা জানান, দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আতঙ্কে থাকারই কথা। দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ক্রমাগত অসহযোগিতা তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এলাকার প্রত্যেক পরিবারকে নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিতসহ কারা এই আক্রমণ চালিয়েছে এব্যাপারেও তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে প্রশাসন ও সরকার এবিষয়ে কতটা সহযোগিতাপরায়ণ হবে এবিষয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বাইরের দলগুলো ইসলামপন্থীদের, বিশেষ করে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারণে সমাজে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তাদের শক্তির চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে। রাজনীতির আলোচনার সূচি অংশত তারাই নির্ধারণ করছে। আশু এ অবস্থার অবসানের সম্ভাবনা নেই; উপরন্তু তা আরও বিস্তৃত হবে বলেই অনুমান করা যায়।
তারা বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না বলে তাদের অভিযোগ৷
তারা বলেন, এই হামলায় পেশি শক্তি যেমন থাকে রাজনৈতিক শক্তিও থাকে৷ রামুতে যেমন দলমত নির্বিশেষে সব দলকে একত্রিত করে হামলা চালানো হয়েছে৷ সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিকির তোলা হয় যে তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়৷ রাষ্ট্র আসলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ