নড়াইলের কালিয়ার নবগঙ্গা নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন রমরমা ব্যবসা চললেও এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আজ মঙ্গলবার(০২ ফেব্রু) নদীতে ড্রেজার বসিয়ে এক যুবলীগ নেতার বালু উত্তোল বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী। এসময় গ্রামবাসীর চাপে যুবলীগ নেতার সহযোগীরা নদী থেকে ৩০টি বালু উত্তোলনের ড্রেজার উঠিয়ে নিয়ে স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ নদীর ভাঙন থেকে জনপদকে রক্ষার জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কয়েকবার লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। অবৈধভাবে বালু কেটে নেয়ায় বছরের পর বছর নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীর ভেঙে যাচ্ছে। ঘাটের পাড়ের রাস্তাসহ ফসলি জমি নদীর মধ্যে বিলীন হতে শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না, আমরা অসহায় মানুষ আমাদের কথা কে শোনে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় একবছর ধরে কালিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে কোন ইজারা ছাড়াই দৈনিক ৫০টি ড্রেজার মেশিনে উত্তোলিত বালু ১৫০ ট্রলারে বহন করে থাকে। ওইদিন নবগঙ্গা নদীর দেওয়াডাঙ্গা-কুলসুর ঘাট এলাকায় দুই পাড়ে প্রায় ৩০টির বেশী ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে এবং প্রায় ১০০টি বালুবাহী জাহাজ বালু বহন করছে।
উপজেলার নোয়াগ্রামের বাসিন্দা আসলাম, জহির মোল্লা ও ইলিয়াস মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, নবগঙ্গা নদী থেকে বিরতিহীনভাবে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে বালু উত্তোলনের ফলে গ্রামের একটি বাজার, ৩টি মসজিদ, ১টি মন্দিরসহ কয়েক একর ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। কালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনুর মোহাম্মাদ আনু বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করে কোটি টাকা আয় করছে। আর নদীর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পাশাপশি নদীতে যাচ্ছে জনপদ ও ফসলি জমি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি তাতে আকৃষ্ট হয়নি। তাই জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ নদী থেকে ড্রেজার তাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যুবলীগ নেতা মো. রবিউল ইসলাম খান অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি টেন্ডারের মাধ্যমে দেওয়াডাঙ্গা বালু মহালটি ইজারা নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া নির্ধারিত সীমানার মধ্য থেকেই তিনি বালু উত্তোলন করছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবৈধ দখলদারেরা সাধারণত স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাবান হয়ে থাকে, বিশেষত রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এমন ব্যক্তিরা এসব তৎপরতায় লিপ্ত হয় এবং তাদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করে না। তাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দমন করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রশাসনের সাথে অসাধু অংশের সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের যোগসাজশও ছিন্ন করতে হবে। আর অবিলম্বে বেদখলে থাকা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর ও ব্যাপক অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/ এফএ/২২৪০
আপনার মতামত জানানঃ