বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক সংলাপে না ডাকতে ফেসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম যে ঘোষণা দিয়েছে- তারা রংপুরে আসতে পারবে না। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এই রংপুরের পার্টি অফিসে বসে থাকবেন। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি কতটুকু। যদি এই আন্দোলনকে আমরা জনস্রোত করতে না পারি তাহলে জাতীয় পার্টি থেকে নাকে খত দিয়ে চলে যাবো।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর কোনও প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না।’ এ সময় দলের নেতাকর্মী স্লোগান দিয়ে তাকে সমর্থন জানান।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রংপুর শহরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন। সেখানে দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কোনও আলোচনা নয়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার- আপনাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, রংপুরে কোনও রাজনৈতিক সংলাপে যদি জাতীয় পার্টিকে ডাকা না হয় সম্মান দেওয়া না হয়- তাহলে জাতীয় পার্টি নিজেই অধিকার আদায় করে নেবে। এর জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকবেন।’
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে নিজ নিজ ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ফেসবুক পোস্টে সারজিস লেখেন, ‘জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালালদের প্রধান উপদেষ্টা কিভাবে আলোচনায় ডাকে?’
হাসনাত লেখেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে, আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।’
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতে এক সভায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ ঘোষণা দেন। এরপর ওই রাতেই নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে তারা ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা হুশিয়ার সাবধান’, ‘দালালের ঠিকানা এই রংপুরে হবে না, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, ‘সারজিস-হাসনাতের অপমান, মানবে না রংপুরের জনগণ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের প্রতিনিধি ইমরান আহমেদ, ইমতিয়াজ ইমতি, মোতাওক্কিল বিল্লাহ প্রমুখ। তারা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমা চাইতে হবে, বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তারা আরও বলেন, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের নায়ক। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এখতিয়ার জাতীয় পার্টির নেই।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। গত ৮ অক্টোবর ফেসবুক পেজে পোস্টে তারা জাতীয় পার্টিকে ‘স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর’ ও ‘মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালাল’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সোমবার রাতে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক সংলাপে না ডাকতে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এ জন্য তারা রংপুরে আসতে পারবে না। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এই রংপুরের পার্টি অফিসে বসে থাকবেন। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি আছে কি না।’
আপনার মতামত জানানঃ