গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখত নৌকা প্রতিকে মেয়র নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করা সংক্রান্ত একটি মামলায় পৌর মেয়র ও সাবেক কাউন্সিলরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বুধবার(২০ জানু) পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ আদেশ জারি করেন সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কুদরত ই এলাহী।
যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারির পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র-১) হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মোঃ সেলিম উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলম। তারা মামলার এজহারভুক্ত আসামি নন। পুলিশ অভিযোগপত্রে তাদের নাম যুক্ত করেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করতে আসে দুই রোহিঙ্গা। তারা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চার ব্যক্তির সহযোগিতায় সুনামগঞ্জে আসেন। ওই চার ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ওইদিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন তারা। বিকেলে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দিতে ফের পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এতে দুই রোহিঙ্গা ও তাদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ ও একটি মামলা করেন পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ওই দিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার। এর আগে ওই দুই রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেলের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্মসনদ নিয়েছিলেন।
এই মামলায় গত ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে এজাহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলমকে যুক্ত করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ ওই কর্মকর্তারা যুক্ত রয়েছেন। পরে আইনজীবী কাওসার আলম সেটি সত্যায়ন করেছেন।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি শুনেছেন তিনি। তবে যে ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, সেটির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, ক’দিন আগেই বাংলাদেশের পাসপোর্টে মালয়েশিয়া যাওয়া কয়েক রোহিঙ্গা আটক হওয়ার খবর চাউর হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশান্তরি হওয়ার বহু ঘটনা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের একাজে স্বার্থান্বেষি স্থানীয়রা সহযোগিতা করে বলে জানান তারা। স্থানীয় প্রভাবশালী কিংবা নেতৃস্থানীয় লোকেরা পাসপোর্ট অফিসে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অর্থের লোভে এ প্রতারণা করে থাকেন। এতে বিশ্বের দরবারে রোহিঙ্গা কর্তৃক বাংলাদেশ সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি দাবি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৭
আপনার মতামত জানানঃ