দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকার জোগান দিতে পারছে না। কোনো কোনো ব্যাংক ২০ হাজার টাকার বেশি চেক নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে গ্রহণ করছে না। এটিএম বুথগুলোতেও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না নগদ টাকা। ভালো ব্যাংকগুলোতে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে বা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট থাকায় এ সমস্যা প্রকট হয়েছে। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে।
মূলত ব্যাপকভাবে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিজেদের কাছে রাখার কারণেই এখন ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট বেশি। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মোট ব্যাংকের শাখা ১১ হাজার ২২০টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ শাখাতেই এখন নগদ টাকার সংকট চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের কারণে বাজারে টাকার প্রবাহ কিছুটা কমানো হয়েছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোতে টাকা যাচ্ছে না। একই কারণে নগদ টাকার প্রবাহও কম। জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে দেশের সব খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়। ওই সময়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম বেশি মাত্রায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নগদ টাকা স্থানান্তর ব্যাহত হয়েছে। এতে অনেকেই নগদ টাকা তুলতে পারেননি।
এতে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে তারা ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে নগদ টাকা উত্তোলন শুরু করেন। আগস্টের শুরু থেকেই ব্যাংকে টাকার সংকট প্রকট হয়। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। এর আগে-পরে বেশ কয়েকদিন আন্দোলন ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে নগদ টাকা স্থানান্তর করা যায়নি। ফলে সংকট আরও বাড়ে। সরকার পতনের আগে ও পরে ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে যায়। কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত নগদ টাকা তুলে নিয়ে যান। অনেকের বাসা থেকে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিদেশে পালানোর সময়ও দেশ থেকে নগদ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গেছেন অনেকে।
এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছেও নগদ টাকা পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিমান্ডে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে বিভিন্ন স্থানে রাখা বা পাচার করার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেকে নগদ টাকা তুলে ব্যাংকের লকারে রেখেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসা থেকে নগদ ৫ কোটি টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হওয়ার সময় তাদের কাছ থেকেও নগদ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বাসা থেকে নগদ ৩ কোটি ১ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সিলেট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে দালালরা ৬০-৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তিনি জানান আটক হওয়ার পর। নরসিংদীতে ৮৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ