ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে—সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সম্মতি জানিয়েছিলেন শিল্প মালিকরা। বুধবার শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। অথচ গতকাল পর্যন্ত শিল্প-অধ্যুষিত আট এলাকার কেবল ৩২ শতাংশ কারখানা মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে। এ হিসাবে ৬৮ শতাংশের বেতন এখনো অপরিশোধিত। আর ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৭০ শতাংশ কারখানা।
কারখানাগুলোয় গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ পরিস্থিতি সুখকর নয় বলে মনে করছেন শিল্প মালিকরাও। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের ঈদ সামনে রেখে বেতন পরিশোধে মালিকদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ কিছুটা বাড়লেও দাম অনেক কমিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা। সার্বিক পরিস্থিতিতে নগদ অর্থ সংকটের প্রভাব পড়েছে বেতন-বোনাস পরিশোধ চিত্রে।
আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেট—এ আট শিল্প-অধ্যুষিত এলাকায় মোট কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৪৬৭। শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৩২ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। আর ৭০ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের বোনাস দিয়েছে।
শিল্প-অধ্যুষিত এলাকায় থাকা শ্রমঘন কারখানাগুলো মূলত পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের। আট শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫৮৯। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ কারখানার বেতন পরিশোধ হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। বোনাস দেয়া হয়েছে ৭৫ শতাংশ কারখানায়। শিল্প এলাকাগুলোয় তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৬২৮টি। এর মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে ১০ শতাংশ। বোনাস দিয়েছে ৬২ শতাংশ কারখানা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি এসএম মান্নান কচি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বেতন-ভাতা পরিশোধের অবস্থা বেশি ভালো না। বোনাস দেয়া হয়ে গেছে ৯৯ শতাংশ কারখানায়। বেতন এখন পর্যন্ত পরিশোধ হয়েছে ৫৬ শতাংশে। আশা করি সোমবার ৮৫ শতাংশ হয়ে যাবে।’ এবার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের (গতকাল) মতো দিনে অর্থাৎ ঈদের আগ মুহূর্তে ৫৬ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে, এমন ঘটনা আগে ঘটেনি।’
কয়েক মাসে রফতানি বাড়লেও পোশাকের দাম বাড়ছে না উল্লেখ করে এসএম মান্নান বলেন, ‘মজুরি বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, ব্যাংকে সুদের হার বেড়ে গেছে। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই পোশাকের দাম সমন্বয়ের কথা ছিল। কিন্তু কেউ এটা করছে না। সব মিলিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। তার পরও আমরা আশা রাখি ঈদের আগেই বেতন-বোনাস পরিশোধ হয়ে যাবে।’
ঈদের আগে প্রায় প্রতি বছরই অস্থিরতা দেখা দেয় দেশের শিল্প-অধ্যুষিত এলাকার কারখানাগুলোয়। এবারো বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যা হতে পারে, এমন ৪১৬টি কারখানা চিহ্নিত করে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারক ও শিল্প মালিকদের আগেই অবহিত করেছিল শিল্প পুলিশ। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত এক সভায় বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন কলকারখানার বেতন পরিশোধের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা। গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে গোলযোগের আশঙ্কা রয়েছে এমন কারখানাগুলো চিহ্নিত করা। এ বিষয়ে মালিক পক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের করণীয় নির্ধারণ।
কোনো গার্মেন্ট মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প উপায় বের করারও অনুরোধ জানানো হয় ওই সভায়। তাদের বলা হয়, মালিক-শ্রমিক সমঝোতার ভিত্তিতে যেন ঈদের ছুটি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে ঈদের আগে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থায়ই শ্রমিক ছাঁটাই বা লে অফ না করার বিষয়েও অনুরোধ করা হয় শিল্প মালিকদের।
আপনার মতামত জানানঃ