অ্যান্টার্কটিকায় সাগরের বরফস্তর টানা তিন বছর ধরে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ প্রবণতা পৃথিবীতে জীবনধারণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় বিজ্ঞানীরা ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ বলেও জানিয়েছেন।
পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের এই মহাদেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানী মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল দ্য পাবলো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দৃশ্যত মানুষ এ নিয়ে সতর্কবার্তা গায়ে লাগাচ্ছে না।
অ্যান্টার্কটিকার সাউথ শেটল্যান্ডের লিভিংস্টোন আইল্যান্ড থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে স্পেনের এই ভূতত্ত্ববিদ বলেন, ‘আমরা (বিজ্ঞানীরা) খুবই উদ্বিগ্ন। কেননা, আমরা নিজেরা কীভাবে এর সমাধান করব, সেই বিষয় দেখতে পাচ্ছি না।’
মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল আরও বলেন, ‘যা ঘটছে, সে সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করতে আমরা যত সতর্কবার্তাই পাঠাই না কেন, মনে হচ্ছে তা শোনা হচ্ছে না। প্রমাণ থাকার পরও আমরা যেন শুধু সতর্ককারীই।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) গত বুধবার জানিয়েছে, অ্যান্টার্কটিক সাগরের ন্যূনতম বরফের বিস্তৃতি ২০ লাখ বর্গকিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে টানা তিন বছরের মতো এটি দেখা গেছে।
টানা ৩ বছর অ্যান্টার্কটিকার ন্যূনতম বরফের স্তর এভাবে কমে যাওয়ার এই অবস্থা গত ৪৬ বছরের মধ্যে একটি রেকর্ড।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়াটা মহাসমুদ্রের স্তরের ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে সমুদ্রের স্বাভাবিক পানির স্তর সূর্যের রশ্মি যতটা প্রতিফলিত করতে পারে, সাদা বরফের স্তর তার চেয়ে বেশি করতে পারে। বরফের স্তর কমলে তা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। পর্যায়ক্রমে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণ হয়ে উঠতে পারে।
দ্য পাবলো বলেন, ‘আমরা যদি পৃথিবী নামের এই গ্রহের জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে বহুদূরের কোথাও থাকি, তবু অ্যান্টার্কটিকায় যা ঘটছে, বাস্তবে তা পৃথিবীর বাকি সব অংশের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিশ্বের তাপমাত্রা এরই মধ্যে সার্বিকভাবে প্রাক্-শিল্পস্তরের চেয়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দ্য পাবলো বলেন, ‘নিজেদের কাছে আমাদের এ প্রশ্ন করতে হবে যে আমরা যেভাবে চলছি, তা আসলেই কি ঠিক আছে? কেননা, পরিশেষে আমরা আমাদের এ গ্রহকে হারাব (বাসযোগ্যতা হারাব)।’ আমাদের বসবাস করার মতো দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই বলেও সতর্ক করে দিন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ