মহাকাশ বা মহাশূন্য বলতে পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত এবং খ-বস্তুসমূহের মধ্যে প্রসারিত স্থানকে বোঝায়। মহাকাশ সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা একটি শূন্যস্থান নয়। এটিতে খুবই কম ঘনত্বের কণা থাকে যাদের সিংহভাগই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের প্লাজমা দিয়ে গঠিত। এছাড়াও মহাকাশে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, চৌম্বক ক্ষেত্রসমূহ, নিউট্রিনো, মহাজাগতিক ধূলি ও মহাজাগতিক রশ্মিসমূহ বিদ্যমান।
খ্রিস্টীয় ২০শ শতকে অধিক-উচ্চতার বেলুন উড্ডয়নের আবির্ভাব হলে মানবজাতি সর্বপ্রথম মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু করে। এরপরে মানববাহী রকেট উড্ডয়ন এবং তারও পরে মানব যাত্রীবাহী পৃথিবী আবর্তন (Earth orbit) সম্পন্ন হয়। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানব হিসেবে মহাকাশে থেকে পৃথিবী আবর্তন করেন। শূন্যস্থান ও বিকিরণজনিত কারণে রক্তমাংসের মানুষের মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য মহাকাশ অত্যন্ত প্রতিকূল একটি পরিবেশ। এছাড়া অণু-অভিকর্ষ মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়াসমূহের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে পেশীক্ষয় এবং অস্থিক্ষয় হয়। এইসব স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও মহাকাশে মানুষসহ যেকোনও বস্তু প্রেরণ করার খরচও অত্যধিক। মহাকাশে প্রবেশ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে মানব মহাকাশ যাত্রা কেবল নিম্ন কক্ষপথে পৃথিবী আবর্তন এবং চাঁদে গমনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এর বিপরীতে মানববিহীন মহাকাশযানগুলি সৌরজগতের সবগুলি গ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
পৃথিবী থেকে মহাকাশের দিকে তাকালে ঠিক কী দেখতে পান বলুন তো? মহাকাশ বললে হয়তো, অনেক দূরের কথা বলা হবে। আকাশের দিকে খালি চোখে তাকালে সবকিছু পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হয়, তাই তো? কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, মহাকাশে শুধুই ধূলা আছে। তাহলে মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত ছবিগুলিতে কোথাও কোনও ধূলা দেখা যায় না কেন? কারণটা কী জানেন?
কখনও কি মনে প্রশ্ন জাগে, এই ধূলা কোথা থেকে এল এবং এটাকে আদৌ ধূলা বলে কি? প্রকৃতপক্ষে, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এগুলি কোনও সাধারণ ধূলিকণা নয় বরং মহাজাগতিক ধূলিকণা। যাদের সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। মহাকাশ থেকে আনা যে কোনও বস্তুতেই এ ধূলা দেখা যায়। এমনকী সেই সব ধূলা মহাকাশে অবিচারে এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেরায়। কারণ এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের অনেক রহস্যের সন্ধান পান। মহাজাগতিক ধূলিকণা সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাও করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাজাগতিক ধূলিকণা খুব সূক্ষ্ম। তাদের আকার প্রায় ৮০ মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ এগুলো মানুষের চুলের চেয়েও ছোট। এই ধূলিকণাগুলো আসে গ্রহাণু, ধূমকেতু থেকে। এই এত পরিমাণ ধূলা আসে কোথা থেকে?
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশের ধূলার বেশির ভাগই আসে নক্ষত্রদের থেকে। অর্থাৎ যখন একটি তারা খসে পড়ে বা একটি নতুন তারার জন্ম হয়, তখন এটি প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা তৈরি করে। অনেক সময় এই ধুলার সঙ্গে অনেক ধরনের গ্যাস থাকে। স্পেস এজেন্সিগুলো প্রায়ই এগুলোর ছবি শেয়ার করে, যা ধূলা এবং গ্যাস দিয়ে তৈরি। এছাড়া মহাকাশে ধূলিকণার মেঘও তৈরি হয়। আর মহাকাশে ধূলিকণার মেঘ হল মহাবিশ্বের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় বৈশিষ্ট্য। এই মেঘগুলি ক্ষুদ্র কণা, অণু এবং বিভিন্ন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত হয়। মহাজাগতিক ধূলিকণাতে কিছু জটিল জৈব যৌগ থাকে, যা নক্ষত্র দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে এবং দ্রুত তৈরি হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ