বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ ও দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রশমণের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা বিষয়ে বিবৃতি দেয়।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসমিন কবিরত্নে বলেন, ‘সপ্তাহান্তে বিরোধী দলের নেতা ও বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন আগামী জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে ভিন্নমতকে কঠোরভাবে দমন প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে যে ভিন্নমত পোষণ করা অপরাধ নয় এবং অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরে বাংলাদেশে হত্যা, গ্রেফতার ও দমন-পীড়নের চক্র হয়ে গেছে। যা দেশের মানবাধিকারের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।
কবিরত্নে বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আবারো বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সহজ করতে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে।’
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, বিক্ষোভে কিছু ব্যক্তি সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। পুলিশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছে তারা তা চালিয়ে যেতে পারবে। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ থাকতে পারে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনগণের ওপর শারীরিকভাবে হামলা করা যাবে না এবং এই সংকটের সম্ভাব্য বৃদ্ধি এড়াতে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রয়োজনে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কঠোরভাবে মেনে চলবে।
আরো বলা হয়, ঢাকায় শনিবারের (২৮ অক্টোবর) বিক্ষোভ ছিল চলতি বছরের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি এবং ফের পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও সংঘর্ষের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা যান যুবদল নেতা শামীম মোল্লা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। এর একদিন পর বিএনপির বিভিন্ন নেতার বাসায় অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। রোববার গ্রেফতার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরো বলা হয়, বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও সহিংস হামলার প্রমাণ যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অবরোধের প্রথম দিন
প্রায় আট বছর পর বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবারে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঢাকার মিরপুর এবং নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে। দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি গাবতলী থেকে।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না চিরচেনা যানজটও। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৩ দিনের অবরোধ শুরুর প্রথম দিন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের গুলিতে ১ জন নিহত হয়েছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ২ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ দাবি করেন, মঙ্গলবার সকালে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তার ভাষায়, এসময় “আত্মরক্ষার্থে” বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।
নিহত বিল্লালকে নিজেদের একজন নেতা দাবি করেছে বিএনপি। বিল্লাল ছাড়াও এই সংঘর্ষে বিএনপি’র আরো এক নেতা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।
তবে নিহত বিল্লাল হোসেনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
মিরপুর এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে।
এরপর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই জন সদস্য আহত হন বলে জানান ডিএমপি মুখপাত্র।
অন্যদিকে, অবরোধের সমর্থনে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। বেলা ১২টার দিকের এই মিছিল থেকে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছেন সাংবাদিকেরা। তারা বলছেন, দুপুরে বিএনপি’র দলীয় স্লোগান দিতে দিতে একদল লোক মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে আসে।
এরপর হঠাৎ-ই একটি প্রাইভেট গাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আপনার মতামত জানানঃ