বাংলাদেশে নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে আমেরিকা।
বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বাড়তি সতর্কবার্তা জারি করে বলা হয়, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অপরাধ ও সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু এলাকা আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষেত্রে লেভেল-৩ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে চুরি, ছিনতাই, হামলা এবং মাদক পাচার সামনের শ্রেণির অপরাধ। তবে বিদেশিরা জাতীয়তার কারণে এসব অপরাধীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন- এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। সময় ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে।
পর্যটন স্থান, পরিবহন কেন্দ্র, বাজার বা শপিং মল, রেস্তোরাঁ, উপাসনালয়, স্কুল ক্যাম্পাস এবং সরকারি সেবা সংস্থাগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং অন্যান্য নির্বাচনি কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে সফরকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাদের মনে রাখা উচিত যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশও সংঘর্ষ-সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংঘাতের শঙ্কা করে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রাক পর্যবেক্ষক দলের তৈরি করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বা সরকার আমন্ত্রণ জানালে জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বদলে ছোট একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে পারে ইইউ। সরকারকে এ বিষয়ক চিঠি দিয়েছে তারা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে যে, তাদের নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী বলে মনে করছে না। তবে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে ঢাকায় থাকা ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সংঘাত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, কোনো সভ্য দেশে এমনটা কাম্য নয়।
গত বুধবার নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কা করে সিইসিকে দেওয়া স্মারকলিপি প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এ স্মারকলিপি দেন।
সিইসি বলেন, এখনও তারা আশঙ্কা করেন আগামীতেও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সহিংসতা হতে পারে। আমাদের কাছে আবেদন রেখেছেন আমরা যেন বিষয়টি বিবেচনায় নিই এবং আমাদের দিক থেকে যা করণীয় আছে তা যেন করি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন সাম্প্রদায়িক সংঘাত না হয় এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হবে। এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রীতি নষ্ট হলে, যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যাবে।
বৈঠকের পর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছি। আমরা আগামী নির্বাচন সহিংসতামুক্ত ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা বন্ধ চাই। সেই সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচনেরও দাবি জানিয়েছি।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্দিরে ভাঙচুর, হামলা খবর আসছে। বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতাও শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ